সব বয়সের মানুষের জন্য নানা ধরনের শীতবস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।
বাচ্চাদের জন্য বাহারি রঙের সুয়েটার, ছেলেদের জন্য জ্যাকেট থেকে শুরু করে ব্লেজার, মেয়েদের জন্য হাল ফ্যাশনের শীত পোশাক সবই তৈরি হচ্ছে সেখানে; যা ইতিমধ্যে শোভা পাচ্ছে পাইকারি শোরুমে। বিভিন্ন জেলার পাইকাররা সেখানে ভিড় করছেন শীতবস্ত্র কিনতে।
চলতি বছর শীতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এবার ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ গ্রাম থেকে শহরে নিজ নিজ দলের প্রার্থীর জন্য রাত দিন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকবে অধিকাংশ মানুষ।
আর বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরেই থাকতে হবে। আবার নির্বাচনের প্রার্থীরা ভোটারদের মন পেতে শীতবস্ত্র বিতরণ বাড়িয়ে দেবেন। তাই তখন গরম কাপড়ের কদর বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে বিক্রিও ভালো হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
রাজধানীর কেরানীগঞ্জের পোশাক কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি কারখানায় শীত পোশাক তৈরির ধুম লেগেছে। নাওয়া খাওয়া ভুলে কারিগররা তৈরি করছেন বাহারি ডিজাইনের শীত পোশাক।
এমন একটি পোশাক কারখানা নিউ স্বর্ণা প্যান্ট কর্ণার। সেখানে ৪০ জন কারিগর তৈরি করছেন বিভিন্ন ডিজাইনের শীত পোশাক। কেউ সাইজ করে কাটছেন কাপড়; কেউ আবার সেই কাপড় সেলাই করে তৈরি করছেন জ্যাকেট ও ব্লেজারের আকৃতি।
অন্য স্থানে করা হচ্ছে ডিজাইনভিত্তিক অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ। সব শেষে লাগানো হচ্ছে মাপ মতো বোতাম ও চেইন। কারখানার সেলাই মেশিনের শব্দ বলে দিচ্ছে কারিগরদের ব্যস্ততা।
কারখানার মালিক মো. হাসান বলেন, দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। এজন্য এখন থেকেই কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লী ব্যস্ত হয়ে উঠেছে শীত পোশাক তৈরিতে। শীতবস্ত্রের বাজার ধরতে বর্তমানে প্যান্ট তৈরি বাদ দিয়ে শীত পোশাক তৈরি করছি।
আর এজন্য ব্যবসায় খাটিয়েছি প্রায় ৫০ লাখ টাকা। তিনি আরও বলেন, কারিগররা এখন খুব ব্যস্ত। তারা শীত পোশাক তৈরি করে থরে থরে সাজিয়ে রাখছে।
পূর্ব আগানগর আলম টাওয়ারের জারিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শামীম আহমেদ বলেন, শীতবস্ত্র তৈরিতে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। কারখানায় বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি কাপড় দিয়ে শীত পোশাক তৈরি করছি। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা কিনতে শুরু করেছে।
জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ শেখ কাওসার বলেন, কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শীত বাজার ধরতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে মালিক ও কারিগররা; যা ইতিমধ্যে পাইকারি দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এবার শীত মৌসুমে কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লীতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বেচাকেনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে শীত যদি একটু বেশি পড়ে, তবে বিক্রি আরও বেড়ে যাবে। এবারের শীতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় বিক্রিবাট্রা বাড়বে বলে তিনি জানান।
কেরানীগঞ্জের পাইকারি পোশাকপল্লীর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লীতে বিক্রয় কেন্দ্র ও কারখানার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের বেশি। এখানকার বিক্রয় কেন্দ্র ও কারখানায় দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
এছাড়া দেশের শীত পোশাকের প্রায় ৭০ শতাংশ কেরানীগঞ্জ থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না।
জানা গেছে, কেরানীগঞ্জের পোশাক কারখানার মালিকরা দেশি-বিদেশি কাপড় কিনে নিজেদের কারখানায় শীত পোশাক তৈরি করে থাকেন। আবার চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পোশাক এনে বিক্রি করেন। আর এ পল্লী থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা সরাসরি পোশাক কিনে নেন।
এছাড়া অনেকেই নগদে কাপড় কিনে নেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী কাপড় কিনে অর্ধেক টাকা পরিশোধ করেন। পরে বিক্রি শেষ হলে বাকি টাকা পরিশোধ করেন।