গ্রাম বাংলার চিরন্তন ঐতিহ্য নৌকা বাইচ উপভোগ করতে শনিবার বিকেলে খুলনার রূপসা নদীর দুই পাড়ে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিলো। বাইচ চলাকালে নদীর প্রায় ৪ কিলোমিটার লম্বা দুই তীরে, কাষ্টমঘাট, রূপসা ফেরিঘাট ও রূপসা সেতুর ওপরে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। দূরদূরন্ত থেকে মানুষ এই বাইচ দেখতে আসেন।
বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানী গ্রামীণ ফোনের সহযোগিতায় ‘খুলনা নাগরিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ এই নৌকা বাইচের আয়োজন করে। ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর রূপসা নদীতে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
বাইচ উপলক্ষে শনিবার সকালে নগরীতে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। নগরীর শিববাড়ি মোড় থেকে বের হয়ে শোভাযাত্রা হাদিস পার্কে এসে শেষ হয়। এদিকে বাইচ শুরুর আগেই বেলা দুইটা থেকে রূপসা নদীর তীর মানুষে ভরে যায়। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কয়েকশ’ ইঞ্জিন চালিত ট্রলার, বড় বড় অসংখ্য কার্গো এবং নদীর দুই পারের সরকারি বেসরকারি ভবনে চড়ে মানুষ এই নৌকা বাইচ উপভোগ করেন। বেলা আড়াইটায় এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
নগরীর কাস্টমস ঘাটে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে নৌকা বাইচের উদ্বোধন করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খুলনা-২ আসনের সাংসদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার, খুলনা এসএম শফিউল্লাহ, গ্রামীণ ফোনের খুলনা সার্কেল প্রধান মো. আওলাদ হোসেন, হেড অফ মার্কেটিং আবুল হাসনাত, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান, নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি মোল্লা মারুফ রশীদ।
এতে সভাপতিত্ব করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। বক্তারা রূপসা ও ভৈরব নদী খনন করে দক্ষিনাঞ্চলের নদী কেন্দ্রিক ব্যবসা-বানিজ্য সম্প্রসারনের দাবি জানান।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় মোট ৩৪টি নৌকা অংশ নেয়। তিন ক্যাটাগরিতে অংশ নেওয়া প্রতিটি নৌকাতে প্রায় অর্ধশত মাঝি ছিলো। বড় গ্রুপে খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবন টাইগার প্রথম, ভাই ভাই জলপরি তেরখাদা দ্বিতীয় ও আল্লাহ ভরসা তেরখাদা তৃতীয় স্থান লাভ করে। বিশেষ বাছারি গ্রুপে ফলিয়া এন্টারপ্রাইজ সোনাডাঙ্গা প্রথম, সোনারতরি কোটালিপাড়া দ্বিতীয় ও মা-বাবার আর্শিবাদ কোটালিপাড়া তৃতীয় হয়। এছাড়া ছোট গ্রুপে ভাই ভাই দূরন্ত পাইকগাছা প্রথম, সোনার তরী কয়রা দ্বিতীয় ও দূরন্ত পাইকগাছা তৃতীয় হয়েছে।
নৌকা বাইচে বড় গ্রুপে প্রথম পুরষ্কার দেয়া হয় এক লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরষ্কার ৬০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় পুরষ্কার ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া ছোট গ্রুপ ও বিশেষ বাছারি গ্রুপে প্রথম পুরষ্কার দেয়া হয় ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরষ্কার ৩০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় পুরষ্কার ২০ হাজার টাকা। সন্ধ্যায় রূপসা ঘাটে এ উপলক্ষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।