প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং চর্বি জাতীয় খাবার থাকাটা খুবই জরুরি। এর মধ্যে শরীরের গঠন উপাদান হিসেবে মুখ্য কাজ করে প্রোটিন। প্রতিদিন ক্যালরির চাহিদার অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রোটিন থেকে পূরণ করা উচিত।
খাবারের এ উপাদান শারীরিক বিকাশে ও মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করে। পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এ প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে আমাদের নির্ভর করতে হয় মাছ, দুধ, ডিম এবং মাংসের ওপর। আর মাংসের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনই হত্যা করতে হয় অসংখ্য প্রাণী। হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, উট, দুম্বা কত ধরনের প্রাণীই না আমাদের হত্যা করতে হয় প্রতিদিন। এ চিন্তা থেকেই বিজ্ঞানীরা বিকল্প মাংসের যোগান খোঁজার প্রচেষ্টা থেকে আবিষ্কার করেছেন কৃত্রিম মাংস। এ মাংস তৈরি করতে বিজ্ঞানীরা দ্বারস্থ হয়েছেন বায়োটেকনোলজির।
বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে কৃত্রিম মাংস। স্বাদ, গন্ধ একেবারে আসল মাংসের মতোই। শুধু তা-ই নয়, এর পুষ্টিমানও শতভাগ এক। এ কৃত্রিম মাংসকে ‘কালচারড মাংস’, ‘সিনথেটিক মাংস’, ‘কোষ-কালচারড মাংস’, ‘ভ্যাট মিট’, ‘ল্যাব-উত্পাদিত মাংস’ হিসেবে নামকরণ করা হচ্ছে।
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৩১ সালে উইনস্টন চার্চিলের মাথায় আসে কৃত্রিম মাংসের কথা। তিনি যুক্তি দেন, চিকেন ব্রেস্ট বা চিকেন উইংস খাওয়ার জন্য আস্ত একটা মুরগি হত্যা করার কোনো মানে হয় না। এর জন্য উন্নত মিডিয়াম কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা যায় মুরগির আলাদা আলাদা অঙ্গ।
এর ৪০ বছর পর ১৯৭১ সালে ল্যাবের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে আট সপ্তাহের সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মাস্কুলার ফাইবারের চাষ করেন বিজ্ঞানী রাসেল রস। প্রথম দিকে এ গবেষণা থেকে এক স্তরের এক ধরনের মাংস পেশি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। এরপরও অপেক্ষা করতে হয়েছে আরো ২০ বছর। অবশেষে ১৯৯০ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম মাংস তৈরিতে সাফল্য লাভ করেন। তারা আবিষ্কার করতে সক্ষম হন এক ধরনের স্টেমসেল। কিন্তু এরপরও সেই সময় তৈরি করা সম্ভব হয়নি মাংস।
আর এবার ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম মুরগির মাংসের চিকেন নাগেট তৈরির ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি খাবার কোম্পানি। মুরগির স্টেম সেল থেকে তৈরি হচ্ছে এ মাংস। এক সময় যে মাংস শুধু ল্যাবরেটরিতেই সীমাবদ্ধ ছিল সেই মাংসের নাগেট নিয়ে এসেছে কোম্পানিটি। আপাতত এ মাংসের দাম কিছুটা বেশি হলেও তাদের পরিকল্পনা এটির ক্রয় ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা। সেটি সম্ভব হলে অচিরেই সুপার মার্কেটের একটা বড় অংশ দখল করে নেবে কৃত্রিম মুরগির মাংসের নাগেট। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মাংসের চাহিদা মেটার পাশাপাশি প্রাণী হত্যাও কমে আসবে। —বিবিসি