জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন কর্তৃক অযৌক্তিক ভয়েজ কলরেট বৃদ্ধি, ইন্টারনেটের মূল্য সমন্বয় ও টেলিকম খাতে নৈরাজ্যবন্ধে ১ ঘন্টা মুঠোফোন বন্ধ করে প্রতিকী ধর্মঘট কর্মসূচী পালন করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে ধর্মঘট কর্মসূচীতে সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, টেলিফোন খাতে বর্তমানে নৈরাজ্য দেশের যে কোন সেক্টরকে হার মানিয়েছে। সড়ক এর বেহাল দশার চাইতে খারাপ আবস্থার দিকে যাচ্ছে টেলিকম খাত। এ খাতে জবাব দিহিতা নেই বললেই চলে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সরকার যখন ফোরজি চালু করে সে সময় হঠাৎ করে সিম রিপলেসমেন্টের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১২০ টাকা আদায় করা হয়। এরপর গত ১৪ আগস্ট হঠাৎ করে কলরেটে সমতা আনার নামে ভয়েস কলরেট ৫০-৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হল।
তিনি বলেন, চলতি বাজেটে ইন্টারনেটের উপর সরকার ১০% ভ্যাট প্রত্যাহার করলেও আজও তা বাস্তবায়ন করা হলো না। মহান সংসদে পাশ হওয়া বাজেট কি কারনে আজও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না তা জাতির কাছে একটি প্রশ্ন?
গত ১ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে নাম্বার অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর পরিবর্তন শুরু হয়। এখানেও দেখা যায় পূর্বের নির্ধারিত ৩০ টাকা ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করার কথা থাকলেও এমএনপি চালুর দুদিন পূর্বেই জানা গেল এনএমপি চার্জ ৫০ টাকা।
এর সঙ্গে ভ্যাট ১৫ শতাংশ এবং সিম রিপলেসমেন্ট ভ্যাট ১০০ টাকা গ্রাহককে দিতে হবে। এভাবে একের পর এক প্রযুক্তির সম্প্রসারণের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অযৌক্তিকভাবে জোর পূর্বক অর্থ আদায় করে নেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মহিউদ্দীন আহমেদের ভাষায়, অপারেটরদের দৌরাত্বের কাছে অসহায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গ্রাহকদের সুরক্ষা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
তিনি আরও বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন ও ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা গণমাধ্যমের কাছে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখাতে সক্ষম হয়েছিলাম কিভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে অযৌক্তিক ভাবে অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
আমরা দাবী করেছিলাম যে, অফনেট অননেট বাতিল করে ২৫ পয়সা কলরেট করার কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে আমরা কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষন পাই নাই। তাই আজও আমাদেরকে রাজপথে ১ ঘন্টার জন্য মোবাইল ফোন বন্ধ করে প্রতিকী ধর্মঘট পালন করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এরপরেও যদি কলরেট ও ইন্টারনেটের মূল্য কমানো সেই সঙ্গে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণসহ কথায় কথায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ করা না হয়; তাহলে আমরা সারা দেশের গ্রাহকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচীতে যেতে বাধ্য হব।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী বলেন, অপারেটররা এমনিতেই লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। যত্রতত্র ভাবে কলড্রপ, নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন ও বিভিন্ন অফারের নামে লুটপাট করে যাচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা সরকারের কোন উদ্যোগেই আমরা লক্ষ করছি না।
তিনি বলেন, দেশে ব্যবসারত বড় অপারেটরদের মালিক বিদেশি বা বিদেশি রাষ্ট্র হওয়ায় লাভের টাকা বাংলাদেশে বিনিয়োগ না করে স্বেচ্ছাচারিতাভাবে বিদেশে পাচার করছে। তিনি অতিসত্ত্বর টেলিযোগাযোগ খাতের শৃঙ্খলা ফেরানোসহ কলরেট কমানোর পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগপত আন্দোলন গড়ার আহবান জানান।
বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, প্রতি দিনই কয়েক হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করছে অপারেটররা। সে দিকে সরকারের মনোযোগ না দিয়ে উল্টো তাদেরকে আরও লুটপাটের ব্যবস্থা করতে কলরেট বৃদ্ধি করে জনগণের পকেট কাটার সকল বিধি ব্যবস্থা সরকার করে দিয়েছে।
তাই অতিদ্রুত টেলিযোগাযোগ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে কলরেট কমাতে হবে। না হলে সারাদেশে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
ধর্মঘট কর্মসূচীতে আরও বক্তব্য রাখেন জাগো বাঙালির সভাপতি ও বিএন-এর মহাসচিব মেজর (অব.) ডা. হাবিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য হুমায়ুন কবির হিরো, ভাড়াটিয়া পরিষদের আহবায়ক বাহারানে সুলতান বাহার, দূর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের আহবায়ক হারুনুর রশিদ, যাত্রী কল্যাণের যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল ইসলাম, মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের প্রচার সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর কাজী মাহফুজ, কেন্দ্রীয় সদস্য এডভোকেট ইমাম হোসেন, এডভোকেট শেখ সোলায়মান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা, সীমা আক্তারসহ অন্যান্যরা।