শরীর দুর্বল লাগে। ক্লান্তি আসে। শক্তি পাই না। অনেকেই বলেন, একটা স্যালাইন নিলে বোধ হয় ভালো হতো। কিংবা কয়েকটা ভিটামিন খেয়ে নেব কি? আসলে দুর্বলতার চিকিৎসা কিন্তু ভিটামিন বা স্যালাইন নয়। হঠাৎ ক্লান্তি ও দুর্বলতা চেপে বসলে আগে তার কারণ নির্ণয় করা জরুরি। বড় কোনো রোগ হয়তো পেছনে ঘাপটি মেরে আছে, আপনার অসচেতনতার কারণে রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়ে যেতে পারে।
আবার দুর্বলতা কমানোর জন্য না বুঝে স্যালাইন খাওয়া বা শিরাপথে স্যালাইন নেওয়ার কারণে জটিলতাও হতে পারে। যেমন কিডনির সমস্যায় রক্তশূন্যতা হয়, শরীর দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। হার্টের সমস্যাও মানুষকে দুর্বল করে তুলতে পারে, একটু পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠেন হার্টের রোগী। এখন কিডনি বা হার্টের রোগীকে স্যালাইন দেওয়া হলে উল্টো শরীরে পানি জমে যায়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ফলে জটিলতা আরও বাড়ে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আকস্মিক দুর্বলতার কারণ রক্তশূন্যতা। রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা চিহ্নিত না হওয়ার ফলে এর পেছনে দায়ী মূল কারণটিও অজানা রয়ে যেতে পারে। রক্তশূন্যতা হলে আয়রন বড়ি খাওয়া বা রক্ত ভরা কোনো সমাধান নয়, এর পেছনের কারণটা জানা জরুরি। হয়তো এর পেছনে পাকস্থলী বা অন্ত্রে কোনো আলসার, ক্ষত, এমনকি ক্যানসার লুকিয়ে আছে। রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়ে গেলে চিকিৎসায় সফলতার সম্ভাবনাও কমে যেতে থাকে।
থাইরয়েডের সমস্যা ও ডায়াবেটিসের কারণে রোগী দুর্বল অনুভব করতে পারেন। যাঁদের কখনো ডায়াবেটিস ছিল না, তাঁদের ক্ষেত্রে স্রেফ দুর্বলতার মতো লক্ষণ থেকে ডায়াবেটিস ধরা পড়তে পারে। রক্তে প্রয়োজনীয় লবণ কমে গেলে কিংবা কোনো জীবাণুর সংক্রমণ হলেও দুর্বলতা হতে পারে। হালকা জ্বর, ওজন হ্রাস থাকলে দুর্বলতার কারণ হিসেবে যক্ষ্মার কথা ভুলে যাওয়া ঠিক নয়। এর জন্য কোনো ওষুধও দায়ী হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, হতাশা বা ঘুমহীনতার কারণেও কেউ কেউ দুর্বল হয়ে পারেন। অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকেও হতে পারে এই সমস্যা। কারণ যা-ই হোক, হঠাৎ শরীরে স্ট্যামিনা হারানো, দুর্বল লাগা ইত্যাদি উপসর্গে ভিটামিন খাওয়া বা স্যালাইন খাওয়াটা জরুরি নয়, জরুরি হলো কারণ অনুসন্ধান করা। তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো।