৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটার দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। আন্দোলনে সাড়া না থাকলেও এই দাবিতে কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রতিদিনই রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছে। এতে শাহবাগসহ আশপাশের এলাকায় প্রতিদিনই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। এদিকে আন্দোলনের কারণে শাহবাগ এলাকায় অবস্থিত তিনটি প্রধান হাসপাতালের রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এতে শাহবাগ মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বারডেম হাসপাতাল এবং একটু দূরে অবস্থিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাতায়াতে রোগীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্ট হয়ে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায় তার প্রভাব পড়ছে রাজধানীজুড়ে। তীব্র যানজটের কারণে প্রতিদিনই গন্তব্যে পৌঁছতে দুই-তিন ঘণ্টা বেশি সময় লাগছে নগরবাসীর। এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল দুপুর আড়াইটা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের মুখপাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, যেভাবে আমাদের বাবা-ভাইরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, আমরাও সেভাবে যুদ্ধ করে দাবি আদায় করব। প্রয়োজনে সারা দেশ অচল করে দেওয়া হবে। গতকাল সারা দেশে কর্মসূচি পালন করায় তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আগামীকাল (আজ) মন্ত্রিসভায় ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী থাকবেন। আমরা আশা করছি এই প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হবে। এর আগে সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পোষ্যদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বহাল চেয়ে সারা দেশের স্থলপথ, নৌপথ, রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেন ঢাবির এই অধ্যাপক। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করা হবে না, তত দিন পর্যন্ত শাহবাগে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি ও সারা বাংলাদেশে একই কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে।
কোটা বাতিলে উদ্ভূত সমস্যার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে : প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ফলে যে উদ্ভূত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। গতকাল বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর নেতা হাসান আল মামুন বলেন, আমরা সব সাধারণ ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্ব করি, আমরা কখনই কোটার বাতিল চাইনি। আমরা সব সময় পাঁচ দফার আলোকে কোটা পদ্ধতির সংস্কার চেয়েছি।
প্রতিবন্ধীদের ৫ শতাংশ কোটা দাবি : এদিকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণসহ ১১ দফা দাবিতে প্রতিবন্ধীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। গতকাল বেলা ২টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র ব্যানারে শতাধিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এই বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. আলী হোসেন বলেন, সবাই জানে সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের এক শতাংশ কোটা দেওয়া। কিন্তু সত্যিকার অর্থে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো কোটা নেই।