তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:
ফেসবুকের খুব বাজে সময় যাচ্ছে। আবার নয় কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। এর আগে গত আগস্ট মাসেই কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিতে সমালোচনার মুখে পড়েছিল ফেসবুক।
এবারের ঘটনায় ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গসহ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গের অ্যাকাউন্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ফেসবুকের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়, হ্যাকাররা ডিজিটাল টোকেন চুরি করে নিয়েছে। যার মাধ্যমে পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে, যা ফেসবুকের সবচেয়ে বাজে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা।
প্রতি মাসে প্রায় ২২০ কোটি ব্যবহারকারী ফেসবুক ব্যবহার করেন।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, অ্যাকাউন্টের কোনো তথ্য অপব্যবহার করেছে, নাকি ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করেছে, তা এখনো ঠিক করতে পারেনি তারা। এখনো আক্রমণকারী সম্পর্কে বা কোন দেশের ব্যবহারকারী বেশি আক্রান্ত হয়েছে, সে তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে ফেসবুকের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এটি বড় ধরনের আক্রমণ।
এ বছরের শুরুতে ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য ফেসবুক থেকে হাতিয়ে তা রাজনৈতিক কাজে লাগানোর অভিযোগ ওঠে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে। বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ফেসবুককে। বিশ্বজুড়ে হ্যাশট্যাগ ডিলিট ফেসবুক প্রচার শুরু হয় ওই সময় থেকেই।
ফেসবুকের যে নিরাপত্তা ত্রুটি শনাক্ত করা গেছে, তাতে পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ক্ষমতা হ্যাকারের হাতে ছিল। ফেসবুকের এ নিরাপত্তা ত্রুটি ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে ছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার তা ধরা পড়ে। ফেসবুকের ভিউ অ্যাজ ফিচারটির ব্যবহার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অসংগতি ধরতে পারেন ফেসবুকের কর্মকর্তারা।
ভিউ অ্যাজ ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসি সেটিংস যাচাই করার সুবিধা দেয়, যার মাধ্যমে প্রোফাইল অন্যদের কাছে কেমন দেখাবে তার নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন ব্যবহারকারী।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ডার্কট্রেসের পরিচালক জাস্টিন ফিয়ের বলেছেন, ‘এ ঘটনার প্রভাব বিশাল।’
ফেসবুকের নিরাপত্তা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট গাই রোজেন নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টিকে জটিল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি তিনটি বিশেষ সফটওয়্যার ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন। ফেসবুক বলছে, তারা ত্রুটি শনাক্ত করার পরপর গত বৃহস্পতিবারেই তা বন্ধ করে দেয়। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বিভাগ, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও কংগ্রেস, আয়ারল্যান্ডের ডেটা প্রোটেকশন কমিশনকে বিষয়টি অবহিত করে। আয়ারল্যান্ডে ফেসবুকের ইউরোপীয় অঞ্চলের সদর সপ্তর অবস্থিত।
আইরিশ কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ হ্যাকের ধরন ও ব্যবহারকারী ঝুঁকি সম্পর্কে পরিষ্কার জানাতে পারেনি।
পাঁচ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ডিজিটাল কি রিসেট করেছে তারা? এর বাইরে ভিউ অ্যাজ ফিচারটিও বন্ধ করে দিয়েছে। এর বাইরে আরও চার কোটি ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করছে ফেসবুক।
ফেসবুক বলছে, নয় কোটি ব্যবহারকারীকে আবার ফেসবুকে নতুন করে লগইন করতে হবে। এ ছাড়া ফেসবুক দিয়ে লগইন করা হয় এমন অ্যাপেও নতুন করে লগইন করা প্রয়োজন হবে।
শুক্রবার এ ঘটনায় ফেসবুকের বিরুদ্ধে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালতে মামলা করেছেন দুই ফেসবুক ব্যবহারকারী। প্রায় ছয় হাজার ব্যবহারকারী জাকারবার্গের ফেসবুক পেজে এ–সংক্রান্ত অভিযোগ করেছে।