ক্রীড়া ডেস্ক:
উদ্বোধনী ম্যাচের দিনই নাকি এশিয়া কাপ জিতে গেছে বাংলাদেশ!
মাশরাফি বিন মর্তুজার কথা শুনে মনে হলো আজকের ফাইনাল জেতার চেয়ে সেটিও তাঁর কাছে কোনো অংশে কম কিছু নয়, ‘সত্যি বলতে তামিম যেদিন ভাঙা আঙুল নিয়ে মাঠে নেমেছে, তখনই আমি এশিয়া কাপ জিতে গেছি।’
তামিমের ঘটনায় জিতেছেন তবে সেটি ট্রফি নয়, হৃদয়। হৃদয় জিতে টুর্নামেন্ট শুরু করা বাংলাদেশ এরপর একের পর এক বাধা ডিঙানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েও জিতেছে। দুবাই ও আবুধাবির প্রচণ্ড গরমে নানা শারীরিক সমস্যা নিয়েও একঝাঁক ক্রিকেটার খেলেনইনি শুধু, তাঁদের পারফরম্যান্সে আবারও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চেও এসে দাঁড়িয়েছে।
যে মঞ্চ থেকে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে বারবার নেমেও যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। একের পর এক ফাইনাল হারের হতাশায় প্রলেপ দেওয়ার জন্য এবার একটি ট্রফি চাই-ই চাই। কিন্তু সে প্রত্যাশার চাপে ঢলে পড়ার আশঙ্কাও থাকে বলেই হয়তো মাশরাফি তাঁর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ‘ট্রফি’ শব্দটা তেমন উচ্চারণই করলেন না।
তার ওপর ফাইনালে আবার সামনে পাচ্ছে ভারতকেও। বাংলাদেশ ফাইনালে পারে না, প্রতিপক্ষ ভারত হলে আরো না। ইতিহাস বলছে সে কথাই। ভারতের সামনে দাঁড়ানো যায়নি বিশ্ব আসরেও। ২০১৫-র বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে পারেনি। পারেনি গত বছর আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালেও। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হওয়া এশিয়া কাপ ফাইনালেও ভারতের ট্রফি উঁচিয়ে ধরা দেখতে হয়েছে। এই বছরই মার্চে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস টি-টোয়েন্টি ট্রফির ফাইনালেও তাই।
বারবার ভারতের সামনে গিয়ে হোঁচট খাওয়ার নজির থাকায় ভারতীয় এক সাংবাদিক দক্ষিণ আফ্রিকার গায়ে সেঁটে থাকা ‘চোকার্স’ দুর্নামটা বাংলাদেশের গায়েও লেপ্টে দিতে চাইলেন। কিন্তু কাল দুপুরে দুবাই স্পোর্টস সিটির আইসিসি একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেটি শুনেই সবার আগে প্রতিবাদ করলেন যিনি, তিনি শিখর ধাওয়ান। এই আসরে ভারতের সহ-অধিনায়ক পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘বাংলাদেশ কত বছর ধরে ক্রিকেট খেলছে?’
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে ধরলে ১৮ বছর। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতেই বাংলাদেশের ফাইনালে যাওয়ার ঘটনা বেশি। সেসব বিবেচনায় ধাওয়ান এই সিদ্ধান্তেও পৌঁছে গেলেন যে, ‘কখনো কখনো ফাইনালে যাওয়াটাই অনেক বড় ব্যাপার। আমি এ বিষয়টিকে একটু অন্যভাবেই দেখি। আশা করছি কাল (আজ) আমরাই জিতব। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে শিগগিরই বাংলাদেশকেও ফাইনালের বাধা পেরিয়ে যেতে দেখব। ভাগ্য বদলাতে পারে যেকোনো সময়েই।’
আজই দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সেই ভাগ্য বদলের চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের সামনে আশার আলো ও হতাশা, দুটোই আছে। বিশেষ করে কোনো ম্যাচেই টপ অর্ডারের ভালো শুরু দিতে না পারার ব্যাপারটি। যেটি নিয়ে ভীষণ বিরক্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসানও কাল সকালে বলছিলেন, ‘ওরা রানটা আর কবে করবে?’ টপ অর্ডার নিয়ে উদ্বেগ থাকল মাশরাফির কথায়ও। ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে আগে ব্যাট করলে কত রান নিরাপদ, সে প্রশ্নের জবাবেই বেরিয়ে এলো তা, ‘এর উত্তর দেওয়া কঠিন। প্রথমত আমাদের টপ অর্ডার যেভাবে খেলেছে, তাতে কোনো রান আগে থেকে ঠিক করে দেওয়া কঠিন।’
অবশ্য কঠিন হয়ে পড়া অনেক কাজও এই আসরে করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যেমন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতেও যে পাকিস্তানের বিপক্ষে ‘সেমিফাইনাল’ জেতা যায়, সেটির প্রমাণ আবুধাবিতেই রেখে এসেছে বাংলাদেশ। ফিল্ডিংয়ের প্রাণপণ প্রচেষ্টা বোলারদের আরো চাঙ্গা করেছে। দুয়ে মিলে খুলেছে জয়ের পথও। মাশরাফি সেই ম্যাচের শিক্ষাই আজকের ফাইনালেও কাজে লাগাতে বলছেন সতীর্থদের, ‘ছেলেদের জন্য বড় একটা শিক্ষা এটি। তরুণ খেলোয়াড়রা এখন বুঝবে যে দিনের শেষে শেষ বল পর্যন্ত লড়ে যাওয়াই সব কিছু। ভালো ব্যাপার হচ্ছে সাকিব-তামিমকে হারানোর পরও ছেলেরা হাল ছেড়ে দেয়নি। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান ও (সুপার ফোরে) ভারতের কাছে হারার পরেও ওরা পাল্টা লড়ে গেছে। ছেলেরা খুব ভালো করেছে। এখনো একটি ম্যাচ বাকি আছে। আশা করি আমরা আরেকবার লড়ব। দেখা যাক।’
ট্রফি জেতার পথে শেষ বাধা পেরোনোর চ্যালেঞ্জে আজ অবধারিতভাবেই কিছু পরিবর্তন এনেই নামছে বাংলাদেশ। মমিনুল হকের জায়গায় একাদশে ঢুকছেন বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম (অপু)। আগের দুই ম্যাচে ছয় নম্বরে ব্যাটিং করলেও ফাইনালের মঞ্চে ইমরুল কায়েস তাঁর নিজের জায়গাও ফিরে পাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। অর্থাৎ আজ লিটন কুমার দাশের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সে জন্য সৌম্য সরকারকে চলে যেতে হচ্ছে সাত নম্বরে। পাকিস্তান ম্যাচের ব্যাটিংয়ে যিনি বুঝিয়েছেন, ‘যার হয় না নয়ে, তার হয় না নব্বইতেও’! তবে ব্যাটিংয়ে যথারীতি হতাশ করলেও পাকিস্তান ম্যাচে তাঁর বোলিং প্রশংসাই কুড়িয়েছে। ইতিবাচক দিক এটিই যে কোনো না কোনোভাবে অবদান রাখার চেষ্টা আছে সৌম্যর মতো তরুণদেরও।
আরেকটি লড়াইয়ের আগে যা আশার দিকও। পাকিস্তান ম্যাচের আগে অধিনায়ক সতীর্থদের বলেছিলেন, ‘যুদ্ধে নামার পর পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। হয় মরব, না হয় মারব।’ অধরা থেকে যাওয়া ট্রফির জন্য মরণকামড়টা নিশ্চিতভাবেই দিতে চাইবেন মাশরাফিরাও। হৃদয় জেতার পর যে এবার ট্রফি জেতার পালা!