নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আকাশ ও রেলপথের পর এবার সড়কপথে নির্বাচনী যাত্রা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। শনিবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত তিন দিনের এই সড়কযাত্রা শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে শনিবার সকালে রাজধানীর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে শুরু হওয়া দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই সফরের সড়কযাত্রা রাতে চট্টগ্রাম পৌঁছেছে। এর আগে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চারটি জনসভা ও পথসভায় বক্তব্য রেখেছেন ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
এসব সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি ও যুক্তফ্রন্ট নেতাদের কথিত জাতীয় ঐক্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোনো জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। বিএনপির এই ঐক্য তথাকথিত জাতীয় ঐক্য। বিএনপি যে ঐক্য করছে সেটা সাম্প্রদায়িক শক্তির ঐক্য।
তিনি বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে, তাদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য হবে- দেশের মানুষ সেটি বিশ্বাস করে না। তারা ঘরের মধ্যে নেতায় নেতায় ঐক্য করে। তাদের ঠিকানা পল্টন, রাজপথ নয়। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে যারা জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
এসব সভায় ওবায়দুল কাদের জনসাধারণের মাঝে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণা চালান।
প্রতিটি জনসভা ও পথসভায় হাজার হাজার নেতাকর্মী ও মানুষের উপস্থিতিতে জনারণ্যে পরিণত হয়েছিল। পথে পথে মানুষের ঢল নেমেছিল। যাত্রাপথে হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যনার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড দিয়ে স্বাগত জানান নেতাদের। কোথাও কোথাও ফুল ছিটিয়ে বরণ করেও নেওয়া হয়েছে তাদের।
স্লোগানের পাশাপাশি ব্যান্ড পার্টি ও বাদ্য বাজনার তালে তালে নেচে গেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সূচনা ঘটান নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের সমর্থক নেতাকর্মীদের ব্যাপক শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। সব মিলিয়ে সর্বত্র আগাম নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়েছিল।
ওবায়দুল কাদের ছাড়াও এসব জনসভা ও পথসভায় বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ অনেকে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলটির এ নির্বাচনী সড়কযাত্রা শুরু হয়। কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ পৌঁছে সেখানকার রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রথম পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা শহরের টাউন হল মাঠে জনসভা, চৌদ্দগ্রাম হাই স্কুল মাঠে জনসভা এবং সর্বশেষ ফেনী শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফেনী শহরের পথসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে না চাইলে দ্রুত কেন্দ্র কমিটি গঠন করুন। কেন্দ্র রক্ষার ব্যবস্থা করুন।
দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অসুস্থ প্রতিযোগিতা করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি টানাবেন না। নানা অপকর্ম করে যারা জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়েছেন, তারা আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। জনগণের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।
ফেনীবাসীর উদ্দেশে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন। চাঁদেরও কলঙ্ক থাকে। ভবিষ্যতে ভুলত্রুটি শুধরে চলার চেষ্টা করব। আগামী নির্বাচনে নারী ও তরুণ ভোটাররাই আওয়ামী লীগের বিজয়ের প্রধান হাতিয়ার হবে। এ পথসভায় সভাপতিত্ব করেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রহমান বিকম।
কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জের পথসভায় ওবায়দুল কাদের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে বলেন, প্রার্থী হবেন- ভালো কথা। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের অপকর্মের বিরুদ্ধে না বলে চায়ের স্টলে বসে নিজ দলের এমপি ও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কথা বলবেন না। এটা যারা করবেন, তারা দলের মনোনয়ন পাবেন না। নেত্রীর কাছে সবার আমলনামা জমা আছে। অপকর্মের জন্য যারা জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য, তারা দলের মনোনয়ন পাবেন না।
দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব-কোন্দল না করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। পকেট কমিটি করবেন না। দুঃসময়ের কর্মীদের মূল্যায়ন করবেন। দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা দল ছেড়ে যায় না। অতিথি পাখিরা দলের দুঃসময় এলে দল ছেড়ে চলে যায়।
ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা শনিবার রাতে চট্টগ্রামে রাত্রিযাপন করবেন। রোববার কক্সবাজার সফর শেষে সোমবার বিমানযোগে ঢাকায় ফিরবেন তারা। এ সফরকালে বিভিন্ন স্থানে সব মিলিয়ে ১০টি পথসভা, জনসভা, কর্মী সভা ও সুধী সমাবেশ করার কথা রয়েছে।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট আকাশপথে ঢাকা থেকে সিলেট গিয়ে সেখানে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের নেতারা। পরে ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা-নীলফামারী রুটে নির্বাচনী ট্রেনযাত্রা করের দলটির উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা। আগামী ২৫-২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা-পটুয়াখালী-বরগুনা লঞ্চযাত্রা করবেন তারা।