লাইফস্টাইল ডেস্ক:
আজকালকার ১৮ বছর বয়সীরা আগের তুলনায় অনেক সচেতন ও বিচক্ষণ প্রজন্ম বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর কারণ বর্তমানে ওই বয়সীদের একটি বড় অংশকে স্থানীয় পানশালার তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাগারে বেশি দেখা যায়।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর-ওএনএস ২০০০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত জরিপ চালিয়ে এই ১৮ বছর বয়সীদের বিভিন্ন অভ্যাস পর্যবেক্ষণ ও তুলনা করে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তবে এটা সোজাসাপ্টাভাবে বলা যাবেনা যে আজকের এই কিশোর কিশোরীরা “কর্মদক্ষ” এবং ২০০০ সালের কিশোর কিশোরীরা ছিল “মদ্যপ”। এমনটিই জানিয়েছে গবেষণা সংস্থাটি। কিন্তু এটা ঠিক যে আজকালকার তরুণ প্রজন্মের কাছে সিগারেট এবং মদ জীবনের বড় কোন অংশ হতে পারেনি।
অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান ও ধূমপান:
গত বছর ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের ওপর এক জরিপ পরিচালনা করা হয়। সেখান থেকে জানা যায় তাদের মাত্র অর্ধেক শতাংশ আগের সপ্তাহে মদ পান করেছে। তবে ২০০৫ সালে যখন মদ্যপানের অভ্যাস পরিমাপ শুরু হয় তখন এই মদপানের অনুপাত দুই তৃতীয়াংশের কাছাকাছি ছিল। অতিরিক্ত মদপানের অভ্যাসেও বড় ধরণের পতন চোখে পড়ে।২০০৫ সালে চালানো জরিপ অনুযায়ী প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন আগের সপ্তাহে মদের নেশায় মাতাল হয়েছে। ২০১৭ সালে এই মদ খাওয়ার অনুপাত এক চতুর্থাংশেরও নীচে নেমে যায়। আজকালকার যুব সমাজের মধ্যে ধূমপানের হারও হ্রাস পেয়েছে। ২০০০ সালে তাদের ধূমপানের হার যেখানে ৩৫% ছিল সেটা ২০১৭ সালে কমে মাত্র ১৮% দাঁড়ায়।
সেক্স এবং স্মার্টফোন:
সামাজিকীকরণেও তুলনামূলক কম সময় ব্যয় করছে বর্তমান ১৮ বছর বয়সী প্রজন্ম। সেটা দিনে মাত্র ২৫ মিনিট। রেকর্ড সংখ্যক তরুণ এখন বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে ১৮ বছর বয়সীদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন কোর্সে অংশ নেয়। তার কারণ ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রয়োজন। এটি মূলত একটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নিয়মেরই ধারাবাহিকতা। তবে এখনকার অল্পবয়সী নারীরা আগের চাইতে বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ওএনএসে এর গবেষণা প্রতিবেদনে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের মা হওয়ার হার কমে আসার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ২০০০ থেকে ২০০৬ সালে চালানো জরিপ অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের সন্তান জন্ম দেয়ার হার ৫৮% হ্রাস পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, এখনকার ছেলেমেয়েরা সেক্স, সম্পর্ক, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ক সব তথ্য সহজেই জানতে পারে। আর সেটা জানার অন্যতম মাধ্যম স্মার্ট ফোন।
ইন্টারনেট ও গেইমের প্রতি আসক্তি:
২০০০ সাল এবং বর্তমান সময়ের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল অনলাইন বিশ্বের প্রভাব। এখনকার তথ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর উৎস এই অনলাইন। ওএনএস এর প্রতিবেদনটি জানিয়েছে, একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইন্টারনেট সম্পর্কিত ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি অবস্থানে ছিল। কেননা সেই সময় ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট, ইউটিউব বা ইনস্টাগ্রাম বলে কিছু ছিল না। এসব বিষয়ে জানার জন্য কোন স্মার্টফোনের উদ্ভব তখন হয়নি। এই ডিজিটাল প্রযুক্তির উত্থান ১৮ বছর বয়সীদের সময় কাটানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এনেছে।
যুক্তরাজ্যের হারমোনাইড টাইম ইউজ সার্ভে থেকে জানা গেছে, বর্তমান কিশোর কিশোরীরা ২০০০ সালের ছেলেমেয়েদের তুলনায় দিনে ১৭ মিনিট বেশি কম্পিউটারের পেছনে ব্যয় করে। প্রতিদিন অতিরিক্ত আধা ঘণ্টা ভিডিও গেম খেলে সময় কাটায়। এছাড়া অন্যান্য খেলায় আগের চাইতে ৮ মিনিট বেশি সময় দেয়।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও আয়ুষ্কাল:
প্রতিটি মানুষের একটি সাধারণ প্রত্যাশা থাকে। আর তা হল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো দক্ষতা অর্জন করা। কিন্তু এখনকার ১৮ বছর বয়সীরা সাধারণত, তাদের কর্মজীবন কিছুটা দেরীতে শুরু করে বলে ওএনএসের গবেষণায় জানা গেছে। বর্তমানে ১৮ বছর বয়সীদের ৪৩% বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। ২০০০ সালের হিসাবে এই হার ছিল ৬০%। এই বয়সী ছেলেমেয়েদের একটি বড় অংশকে আগের তুলনায় বেশি অর্থনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় মনে হলেও, একে ঠিক বেকারত্ব বলা যায়না। কেননা তারা শিক্ষা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সঙ্গে জড়িত।
যখন প্রশ্ন ওঠে তাদের সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল নিয়ে তখন আজকালকার ছেলেমেয়ে উভয়ের সেই হার বেশ ইতিবাচক। ১৮ বছর বয়সী ছেলে মেয়ে উভয়ের আয়ু ২০০০ সালের হিসাবের চাইতে দুই বছর বেশি।