২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:২৮

১২ শিক্ষার্থীর সন্ধান চায় পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া ১২ শিক্ষার্থীর এখনও খোঁজ মেলেনি। তাদের আটক করার বিষয়ে স্বজনদের কাছে পরিস্কার করে কিছু জানানো হয়নি পুলিশের পক্ষ থেকে।

রোববার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলনে ওই শিক্ষার্থীদের স্বজনরা এমন অভিযোগ করেন।

তারা বলেন, ১২ শিক্ষার্থী কোথায় সে তথ্য তাদের জানা। তারা ডিবির হেফাজতে আছে। কিন্ত ডিবি তাদের আদালতে হাজির করছে না। এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তাদের নিরাপত্তা দাবি করেছেন স্বজনরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ৫ সেপ্টেম্বর ওই ১২ শিক্ষার্থীসহ আরও কয়েকজনকে তেজগাঁও ও মহাখালী এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। অনেককে ছেড়ে দিলেও ১২ জনকে আটক রাখা হয়েছে। আটক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা কখনো আশ্বাস দিচ্ছেন আবার কখনো আটকের কথা অস্বীকার করছেন। যাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের মাধ্যমে স্বজনরা জানতে পেরেছেন, তাদের সন্তানদের ডিবি কার্যালয়ে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের গ্রেফতারের পর অস্বীকার, দেখা করতে না দেওয়া ও আদালতে হাজির না করা প্রচলিত আইনে বেআইনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়- তাদের নিয়ে যেন কোনো ‘নাটক’ সাজানো না হয়। তারা যদি সত্যিই কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাদের আদালতে হাজির করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

‘নিখোঁজ’ জহিরুল ইসলাম হাসিবের বাবা এনামুল হক জানান, তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করতে গ্রামের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীর নজিরপুর থেকে ঢাকায় আসে। তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ার একটি মেসে থেকে পড়ালেখা করছিল। ৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টায় মেস থেকে ডিবি পরিচয়ে কয়েকজন লোক এসে জহিরুলসহ আরও কয়েক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর তিনি মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে যান ছেলের খোঁজে।

এনামুল বলেন, ‘আমার ছেলে সেখানে আছে কি নেই সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য দেয়নি ডিবি। কেউ বলে ডিবি কার্যালয়ে আছে, কেউ বলে নেই।’
‘নিখোঁজ’ সাইফুল্লাহ বিন মানসুরের বাবা মানসুর রহমান বলেন, তাদের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর থানার টেংরি গ্রামে। তার দুই ছেলে সাইফুল্লাহ ও সিফাতকে তেজকুনি পাড়ার মেস থেকে ডিবি ধরে নিয়ে যায়। পরে সিফাতকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্ত সাইফুল্লাকে ছেড়ে দেয়নি। সাইফুল্লাহর একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে। ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ নিতে সে ঢাকায় এসে ছোট ভাই সিফাতের মেসে ওঠে। সেখান থেকে দুই ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সিফাত ডিবির কাছ থেকে ফিরে এসে বলেছে, তার ভাই ডিবির কাছে আছে।
আরেক ‘নিখোঁজ’ ইফতেখার আলম আলম ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে সম্প্রতি ডিপ্লোমা শেষ করেছেন। তার ভাই রাশেদ আলম বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর সকালে তেজকুনিপাড়ার ইউসুফ কুঠির ভবনের মেস থেকে ডিবি পরিচয়ে তার ভাইসহ অনেককে ধরে নিয়ে যায়। যাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছ থেকে তিনি জেনেছেন ইফতেখারসহ ১২ জনকে ডিবি আটক করে রেখেছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও, মহাখালী, তেজকুনিপাড়া ও বিজি প্রেস এলাকা থেকে অন্তত ৪০ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এক দিন পর ১২ জনকে আটকে রেখে বাকি শিক্ষার্থীদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

‘আটক’ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, তিতুমীর কলেজ, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- আল আমিন, মুজাহিদুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম হাসিব, জাহাঙ্গীর আলম, ইফতেখার আলম, তারেক আজিজ, রায়হানুল আবেদীন, মাহফুজ আহমেদ, মেহেদী হাসান, তারিক আজিজ, সাইফুল্লাহ ও বোরহান উদ্দিন।

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৮ ১০:৫৩ অপরাহ্ণ