২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:৫৫
নুডলস বানাচ্ছেন এক সময়ের গ্যাংস্টার ইয়েন ওয়েই-শান

শেফ বনে গেলেন দুর্ধর্ষ গ্যাংস্টার!

রকমারি ডেস্ক:
ইয়েন ওয়েই-শানের জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে আইনের বিপরীতে ছুটে। তাইওয়ানের এক দুর্ধর্ষ গ্যাংস্টার তিনি। তাদের জীবনের সময়টা যায় দাদাগিরি করে। বিত্ত আর ক্ষমতার কমতি থাকে না কখনো। অনেকে আবার অকালে পৈতৃক প্রাণটা খোয়ান। আসলে অপরাধ জগতটাই এমন। কিন্তু তিনি হয়ে গেলেন ‘সাবেক গ্যাংস্টার’। এখন তার সময় কাটে ক্ষুধার্তদের জন্যে নুডলস বানিয়ে!

তার পরিবার একটি নুডলসের দোকান চালায় নিউ তাইপে সিটির এক ঐতিহ্যবাহী বাজারে। ব্যাপক ব্যস্ততা সেই বাজারের। সেখানে তা মা-ই সর্বেসর্বা। তবে ৪০ বছর বয়সী ইয়েন মায়ের সুযোগ্য শীষ্য হয়েছেন। তিনি সেখানে এমন মানুষদের জন্যে নুডলস বানান যাদের আসলে মূল্য পরিশোধের সাধ্য নেই। অর্থাৎ, দরিদ্র ও ক্ষুধার্তদের শেফ বনেছেন তিনি।

স্থানীয় মিডিয়াগুলোর চোখে পড়েছেন ইয়েন। এক ভয়ংকর অপরাধী দলের এই স্টার এখন শেফ হয়ে গেছেন! তিনি এখন দোকানে নুডলস বানান! শাংহাই-ভিত্তিক একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম তার জীবন নিয়ে একটি ভিডিও বানিয়েছে। ওটা এখন ভাইরাল।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার অপরাধ জীবন শুরু হয়। সেই বয়সেই দু’পক্ষের মারামারিতে তিনি এক ব্যক্তিকে মারাত্মকভাবে জখম করেন। সাড়ে চার বছরের জেল হয় তার। কিন্তু মুক্তির পর আবারো আদালতে দাঁড়াতে হয় তাকে। আট বছর আগে অবৈধ অস্ত্র সংক্রান্ত মামলায় আটক হন তিনি। তবে কোনভাবে শাস্তি থেকে বেঁচে যান। আর ওই সময় থেকেই জীবনটাকে সাজাতে দ্বিতীয় সুযোগ খুঁজতে থাকেন।

নিজেই বললেন, এই মামলাটি আমার টনক নড়িয়ে দেয়। আমি শাস্তি থেকে বেঁচে ফিরেছি। এর বিনিময়ে এমন কিছু করতে হবে যার মাধ্যমে জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়। আমার পরিবার এবং স্বাধীনতার বিষয়ে ভাবতে থাকি।

তাদের খাবারের গাড়িতে অনেকগুলো পাত্র। ওগুলো মাংস-হাড় আর নুডলসে পূর্ণ। পাত্রগুলো থেকে ধোঁয়া উঠতে থাকে।

চিংড়ি আর বাঁধাকপি দেয়া একবাটি নুডলসের দাম ৮০ তাইওয়ান ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২০ টাকার মতো। তবে যারা বিল দেয়ার সাধ্য রাখেন না তাদের ফেরান না তিনি। প্রতিমাসে ৬০০-৭০০ বাটি নুডলস বিনামূল্য খাওয়ান তিনি। এরা সাধারণত হতদরিদ্র কিংবা বেকার তরুণ-তরুণী।

চার বছর আগে থেকে নতুন জীবন শুরু করেছেন তিনি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার বাটি নুডলস ফ্রি খাইয়েছেন ইয়েন। আবার যারা শারীরিক অসুবিধার কারণে দোকান অবধি আসতে পারেন না, তাদের বাড়িতে বিনা খরচে নুডলস দিয়ে আসেন তিনি।

তিনি কিছু চ্যারিটি কাজের সঙ্গেও জড়িত। জেলে গিয়ে অপরাধীদের সঙ্গে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

তার নুডলসের দোকানে প্রতিদিন আসেন ৬০ বছর বয়সী আরেক সাবেক গ্যাংস্টার। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, ওই পথে আর ফেরা যাবে না।

ইয়েন আরো জানালেন, আমি অনেক বয়স্ক গ্যাংস্টারদের দেখি। তারা এখন আমার মতোই কিছু করতে চান। কত সময় ইতিমধ্যে নষ্ট করেছি ভাবলে কষ্ট হয়। পরিবার এবং পরিচিত মানুষরা আমাকে সুপথে রাখতে সবসময় উৎসাহ জোগান। যখন গ্যাংস্টার ছিলাম তখন সব সময় সঙ্গে অস্ত্র রাখতাম। কারণ, যখন তখন বিরোধী গ্রুপের কারো মুখোমুখি হতে পারি। তাদের আক্রমণের শিকার হতে পারি। কিন্তু এখন এমন মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়, যারা আমাকে এই অবস্থায় দেখে খুব খুশি হন।
সূত্র: এনডিটিভি

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৮ ৪:১১ অপরাহ্ণ