নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হওয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’র উদ্বোধন করবেন আজ (বুধবার)। এ উপলক্ষে সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর এদিন প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এই ড্রিমলাইনার।
ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’ যুক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে বিমান বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫টিতে। গত ১৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আসে ড্রিমলাইনার। প্রধানমন্ত্রীর পছন্দে নামকরণ করা হয় ‘আকাশবীণা’। ড্রিমলাইনার দিয়ে প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিঙ্গাপুর ও ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল ইনামুল বারী (অব.) বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর ড্রিমলাইনার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে। ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রা শুরু হয়। এখন বিমান বহরে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত সম্পূর্ণ নতুন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার যুক্ত হয়েছে, এটি আমাদের জন্য গৌরবের। দিনে দিনে আমাদের বহরে বিমানের সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে দেশের এভিয়েশন খাতও সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমাদের পরিধি যেমন বাড়ছে, তেমনি সেবার মানও বেড়েছে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এএম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, যাত্রীদের ভ্রমণ নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্য ও আনন্দময় করতে ড্রিমলাইনার নতুন মাত্রা যোগ করবে। বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত হওয়ার ফলে আমাদের চলমান বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট বৃদ্ধি ও নতুন রুটে ফ্লাইট শুরু করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে। এ বিমান জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় খরচ কমবে, মুনাফা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০০৮ সালে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ১০টি নতুন বিমান ক্রয়ের জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউএস ডলারের চুক্তি করে। সেই চুক্তির আওতায় ইতোমধ্যে বহরে যুক্ত হয়েছে ছয়টি বিমান। বাকি চারটি বিমান হলো বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। এর প্রথমটি বিমান বহরে যুক্ত হলো। বাকি তিনটি বিমানের একটি এ বছর নভেম্বরে এবং সর্বশেষ দুটি আসবে আগামী বছর সেপ্টেম্বর মাসে। এছাড়া ২০২০ সালে বোম্বাডিয়ার তৈরি ৩টি নতুন ড্যাশ ৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ বিমান বহরে যুক্ত হবে।
‘আকাশবীণা’য় আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসে ২৪টি আসন ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরমদায়কভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন। দু’পাশের প্রত্যেক আসনের পাশে রয়েছে বড় আকারের জানালা। একইসঙ্গে জানালার বোতাম টিপে আলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। জানালা ছাড়াও কেবিনেও রয়েছে মুডলাইট সিস্টেম।
টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এই ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগে। এটি ঘণ্টায় ৬৫০ মাইল বেগে উড়তে সক্ষম। বিমানটির ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই)। বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হবে ইলেকট্রিক ফ্লাইট সিস্টেমে। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই বিমান ওজনে হালকা। ভূমি থেকে বিমানটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। এর ককপিট থেকে টেল (লেজ) পর্যন্ত ২৩ লাখ যন্ত্রাংশ রয়েছে। প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডি এস-মনিটর রয়েছে।
যাত্রাপথে সরাসরি ৯টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। একইসঙ্গে ড্রিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে ১০০টির বেশি ক্ল্যাসিক থেকে ব্লকব্লাস্টার চলচ্চিত্র। অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারে যাত্রীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য রয়েছে ওয়াইফাই সুবিধা। এছাড়া আকাশে উড্ডয়নের সময় ফোন কল করতে পারবেন যাত্রীরা।