বিনোদন ডেস্ক:
ঈদে বিটিভিসহ দেশের প্রায় ২০টি টিভি চ্যানেলে এক ঘণ্টার নাটক, টেলিছবি ও সাতপর্ব- সব মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক নাটক প্রচার হয়েছে। এসব নাটকে ছিল তারকাদের সরব উপস্থিতি। অভিনেতাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন সৈয়দ হাসান ইমাম, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আফরান নিশো, অপূর্ব, মোশাররফ করিম, ইরফান সাজ্জাদ, তৌসিফ মাহবুব, চঞ্চল চৌধুরী, সজল, জোভানরা। অভিনেত্রীদের মধ্যে তিশা, অপি করিম, মেহজাবিন,ঈশিতা, মম, তানজিন তিশা, সাবিলা নূর, সাফারা একটু বেশি আলোচনায়। আর পরিচালকদের মধ্যে আলোচনায় আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, আশফাক নিপুন, মাবরুর রশীদ বান্নাহ, শাফায়াত মনসুর রানা, রেদওয়ান রনি, শিহাব শাহিন, মিজানুর রহমান আরিয়ান, সুমন আনোয়ার, চয়নিকা চৌধুরী ও কাজল আরেফিন অমিরা রয়েছেন আলোচনায়।
দেখে নেয়া যাক, কে কেন আলোচনায়, কে কেন প্রশংসিত:
সেরা পাঁচ অভিনেতা:
সৈয়দ হাসান ইমাম: ‘পাতা ঝরার দিন’ টেলিফিল্মে অ্যালজাইমার রোগে ভোগা বাবার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। ৮৩ বছর বয়স্ক এ অভিনেতার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়েছে টেলিফিল্মটি। ‘বিনি সুতোর টান’ নাটকে ছোট চরিত্র থাকলেও তাঁর অভিনয় প্রশংসা পেয়েছে।
আফরান নিশো: এবার ঈদে প্রায় ৩৫ টি নাটক-টেলিফিল্মে অভিনয় করেন নিশো। এতগুলো কাজের মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র্য। এই ঈদে সবচেয়ে আলোচনায় ‘লালাই’। কালু চরিত্রে একেবারে সাদামাটা একদম চুপচাপ সহজ-সরল স্বভাবের কৃষক চরিত্রে যেমন তিনি প্রশংসনীয়। তেমনি ‘‘লায়লা তুমি কি আমাকে মিস করো?’ নাটকের প্রেমিক চরিত্রের মিনহাজ। তার অভিনীত এই ঈদে অন্যান্য সেরা কাজগুলো হলো-‘জুনিয়র আর্টিস্ট লতিফ’,‘ এবার তোরা মানুষ হ’, ‘ডাকাতের বউ’, ‘সব গল্প রুপকথা নয়’, ‘শোক হোক শক্তি’,‘ ট্যাটু ৩’ ও ‘ছেলেরাও কাঁদে’।
মোশাররফ করিম: প্রায় ৪০ টি নাটকে অভিনয় করেছেন। বেশিরভাগ কমেডি। এর মধ্যে কমেডি হলেও ‘উগান্ডা মাসুদ’ নাটকে তার অভিনয় প্রশংসা পেয়েছে। তবে তিনি আলোচনায় আছেন ‘দানব’ টেলিফিল্মের এক কুখ্যাত ডাকাতের ভুমিকায় অভিনয় করে। চরিত্রটিকে যেভাবে ছাঁচে ফেলা হয়েছে আর মোশারফ করিম যে অভিনয়টা দিয়েছেন নাটকের নামকরণ স্বার্থক। ভয়ংকর দানবই মনে হয়েছে তার চোখ আর শারীরি ভাষায়।
অপূর্ব: প্রথমে বলতে হবে বাবার চেয়ে ছেলে কম যান না। এবার ঈদে তার ছেলেও আছে আলোচনায়। ছো্ট্ট আয়াশ অভিনয় করেছে ‘বিনি সুতোর টান’ নাটকে। বাবা-ছেলের রসায়ন মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। এবার ঈদে তার আলোচিত অন্যান্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘আদিত্যর মৌনতা’, ‘প্রেম ছবি’, ‘যদি তুমি জানতে’, ‘আমার পক্ষে তোমাকে রাখা সম্ভব না’নাটকগুলো।
ইরফান সাজ্জাদ: এবার ঈদে অন্যতম আলোচিত টেলিফিল্ম ‘কলি ২.০’ নাটকে বখাটে প্রেমিক সেলিম চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অ্যাকশন ড্রামাতে যেমন তার অভিনয় প্রশংসা পেয়েছে। তেমনি রোমান্টিকতায় তিনি এই ঈদের অন্যতম আলোচিত অভিনেতা। তার অন্যান্য দশর্কনন্দিত কাজের মধ্যে রয়েছে ‘বেডসিন’,‘ আমার নাম মানুষ’,‘বিথীর বানান ভুল ছিল’, ‘ফুল হাতা হাফ শার্ট’, ‘বৃষ্টি হয়ে এলে তুমি’।
এছাড়াও রাইসুল ইসলাম আসাদ নামটা বিশেষভাবে নিতে হয়। ‘সোনালী ডানার চিল’ নাটকে নীতিবান শিক্ষক ও বাবার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। বেশকিছু ভালো নাটকে দেখা গেছে তৌসিফ মাহবুব ও জোভানকেও।
সেরা পাঁচ অভিনেত্রী:
তিশা: ‘আয়েশা’ নাটকের আয়েশা চরিত্রে তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। সংলাপ, অভিব্যক্তি আবারও প্রমাণ করেছেন তিশার অভিনয় প্রতিভা। এবার ঈদে তাঁর ‘কলি’ ও ‘ডাকাতের বউ’ অন্যতম সেরা কাজ।
অপি করিম: তিনি মানে বিশ্বাসী। তাইতো হাতেগোনা কাজেও দর্শকের মনে গেথে থাকেন। ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ’ নাটকে তার মানসিক ভারসাম্যহীন চরিত্রে অভিনয় এবার ঈদের অন্যতম সেরা ছিল।
মেহজাবিন: বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রশংসিত অভিনেত্রী। দিনকে দিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। গেল কয়েকবছর ধরেই তাঁর রাতারাতি পরিবর্তন। এবার ঈদে তার অন্যতম আলোচিত নাটক ‘সোনালী ডানার চিল’, ‘লায়লা তুমি কি আমাকে মিস করো’,‘ট্যাটু ৩’,‘ ওগো বধূ সুন্দরী’,‘তোমার অপেক্ষায়’সহ বেশকিছু নাটক।
তানজিন তিশা: তানজিন তিশা সঠিক পথেই হাটছেন। গত দুই ঈদে গ্ল্যামারের পিছনে না ছুটে ভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের চেষ্টা চালিয়েছেন। আর তারই ফলশ্রুতিতে প্রশংসাও জুটেছে। এবার ঈদে তার সেরা কাজ ‘বেডসিন’। বিভিন্ন বয়সের চরিত্রে তিনি অসাধারণ অভিনয় করেছেন। ঈদে তার অন্যান্য প্রশংসিত নাটক ‘লালাই’, ‘বাড়ি ফেরা’,‘প্রেমছবি’।
ঈশিতা: একটি নাটকেই তিনি এবার ঈদের অন্যতম আলোচিত অভিনেত্রী। ‘পাতা ঝড়ার দিন’ নাটকে বাবার খোঁজে ছুটে চলা এক মেয়ের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন। তিনি আবারও প্রমান করেছেন তাদের যুগটা এখনো সেরা।
এছাড়াও মম’র কাজ বেশিরভাগই সেই আগের মতো রোমান্টিক। সেখানে আলাদা কিছু পাওয়া যায়নি। সাফা, শবনম ফারিয়া, অপর্ণা ও সাবিলার রয়েছে কিছু ভালো কাজ।
সেরা পাঁচ পরিচালক:
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: দীর্ঘ দিন পর টেলিভিশন প্রডাকশন নির্মাণ করেছেন। ফের তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এক নাটক ‘আয়েশা’ এখন অনলাইনের অন্যতম আলোচিত কাজ। অসাধারণ সব ক্যামেরা শট ছাড়াও, ব্যাকগ্রাউন্ডের কাজ, কালার গ্রেডিং এবং গল্পের সিকোয়েন্স অনুযায়ী দুর্দান্ত নির্মাণ।
আশফাক নিপুন: সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে ইদানিংকালে তিনি সেরা সব কাজগুলো করছেন। তার ‘সোনালী ডানার চিল’ নাটকে আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার একটি অন্ধকার চিত্র তুলে ধরেছেন। পরিচালকের সাহসের স্বদিচ্ছা এবং সুকৌশলে সাবলীল ভঙ্গিতে পরিবেশনের জন্য তিনি এই ঈদেরও অন্যতম আলোচিত পরিচালক। এবার ঈদে তাঁর ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ’ নাটকটিও বেশ প্রশংসা পেয়েছে।
শাফায়াত মনসুর রানা: ‘আমার নাম মানুষ’ টেলিফিল্মের জন্য তিনি এবার ঈদের অন্যতম আলোচিত পরিচালক। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার অনিয়মে পিষ্ঠ মানুষেরা মুখ বুঝে কেবল সব অন্যায় সহ্য করে। সোচ্চার হওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। ঐক্যতা পারে রুখে দাড়াতে। সময়ের জন্য প্রযোজনীয় গল্প বলেছেন তিনি।
রেদওয়ান রনি: ‘পাতা ঝড়ার দিন’ নাটকের মাধ্যমে অনেকদিন পর স্বমহিমায় ফিরেছেন টেলিভিশন নাটকে। বেশ যত্ন নিয়ে প্রতিটি দৃশ্য সাজিয়েছেন।
মাবরুর রশীদ বান্নাহ: এই ঈদে তিনি তেরটি নাটক পরিচালনা করেছেন। প্রায় সবগুলোই ছিল ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচের। নাটকগুলো বেশ প্রশংসাও পেয়েছে। প্রতিটি কাজেই ছিল ম্যাসেজ। আমি-তুমি রোমান্টিক গল্পের নাটকেও ভাবিয়েছেন অনেককিছু। এবার ঈদে তার সবচেয়ে আলোচিত নাটক ‘লালাই’ ও ‘বেডসিন’। এছাড়াও ‘এবার তোরা মানুষ হ’, ‘জীবন এখানে এমন’, ‘সুখী পরিবার’,‘কাদঁবোনা’,‘ছেলেরাও কাঁদে’,‘ ‘আমার পক্ষে তোমাকে রাখা সম্ভব না’ অন্যতম।
এছাড়াও শিহাব শাহিনের ‘বিনি সুতোর টান’, ‘আদিত্যের মৌনতা’, দিপু হাজরার ‘কলুর বলদ ২’, মাহমুদ দিদারের ‘সিনেমা সিনেমা খেলা’, হিমেল আশরাফের ‘সব গল্প রূপকথা নয়’, আবরার আতহারের ‘কলি ২.০’, কাজল আরেফিন অমির ‘ট্যাটু ৩’, মাহমুদুল ইসলামের ‘দ্যা অরিজিনাল আর্টিস্ট’, মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘শোক হোক শক্তি’, সুমন আনোয়ারের ‘ডাকাতের বউ’,‘জুনিয়র আর্টিস্ট লতিফ’ নাটকগুলোও আলোচনায় ছিল।