২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:৫৫
বৃহস্পতিবার সিলেটে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের।

ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিএনপির আপত্তি কোথায়: কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ইভিএম পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিএনপির আপত্তি কোথায়? তারা কী চায়? যত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি এ দেশে আর হবে না। হতে দেওয়া হবে না।

বৃহস্পতিবার সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্টারি মাঠে সিলেট মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এটি আওয়ামী লীগেরই দাবি ছিল। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ যুক্তি, তথ্য-উপাত্ত এবং বিভিন্ন দেশের উদহারণ তুলে ধরে এই দাবি জানিয়েছিল। সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও ইভিএমের ব্যবহার হয়েছে। এ পদ্ধতিতে দ্রুত ভোটগ্রহণ, গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা যায়। আর সিলেটের নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে ইভিএমের ফলাফলে বিএনপিই জিতেছিল। তাহলে ইভিএম ব্যবহারে তাদের আপত্তি কোথায়?

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সভার আয়োজন করা হলেও সেখানে নেতাদের বক্তব্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাম্প্রতিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের প্রসঙ্গই বেশি প্রাধান্য পায়। সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা ওই পরাজয়ের জন্য সিলেটের নেতাদের দ্বন্দ্ব-কোন্দলকে দায়ী করে আত্মবিধ্বংসী এ কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক শাস্তি নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, সিলেটে কারা কী করেছেন, নৌকা মার্কা ঠেকাতে আত্মবিধ্বংসী প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন, তারা রেহাই পাবেন না। সিলেটে ভাষণ দিতে আসিনি। এসেছি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা আবারও নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংলাপের বিরুদ্ধে নয়। তারাও সংলাপ চায়। কিন্তু কাদের সঙ্গে সংলাপ হবে? ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা কি খালেদা জিয়াকে ফোন করে সংলাপের আহ্বান করেননি? খালেদা জিয়া নোংরা ভাষায় সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। খালেদা জিয়ার ছেলের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সান্ত্বনা দিতে গেলে তার মুখের ওপর ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেদিন ঘরের দরজা বন্ধ করে খালেদা জিয়া সংলাপের দরজাই বন্ধ করে দিয়েছেন।

নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন মহল থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কারা কারা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া যাচ্ছেন- কারা গোপন ও প্রকাশ্য বৈঠক করছেন, সব তথ্যই জানা আছে। ষড়যন্ত্রের চোরাগলি দিয়ে ক্ষমতায় আসার চক্রান্ত দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত, প্রতিরোধ করব। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকলে তারা কীভাবে এই হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন, পৃষ্ঠপোষকতা করেন? এই অপরাধের দায় বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তার ছেলে হাওয়া ভবনের যুবরাজ তারেক রহমান কীভাবে অস্বীকার করবেন? বিচারের রায় কী হবে জানি না। কিন্তু সত্য বলেই যাব।

সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি ষড়যন্ত্র ছাড়া জনগণের ওপর কখনও আস্থা রাখেনি। এবারের নির্বাচনকেন্দ্রিক তাদের ষড়যন্ত্রে সুশীল সমাজের কিছু লোক জড়িত। আগামী নির্বাচন যথাসময় হবে। কোনো ষড়যন্ত্রই এই নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। যারা করতে আসবে, জনগণ তাদের রাস্তায় শায়েস্তা করবে।

সিলেটের পরাজয় প্রসঙ্গে দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলের মধ্যে দুর্বলতা, দোদুল্যমন্যতা ও বিশ্বাসঘাতকতা ছিল কি-না তা তদন্ত করে বের করতে হবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। না হলে আত্মপ্রবঞ্চনাকারীরাই বারবার বিজয়ী হবে। শেখ হাসিনা পরাজিত হবেন।

সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, প্রয়োজনে আমরাও চিহ্নিত করব কারা আওয়ামী লীগের নাম করে দলকে ধ্বংস করেছে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে যারা বেইমানি করে ধানের শীষের গান গাইবেন তাদের ছাড়া হবে না।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, এ কে এম এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় এমপি ইমরান আহমেদ ও মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী।

শোকসভা শেষে ওবায়দুল কাদের সিলেট সার্কিট হাউসে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়, অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ওবায়দুল কাদের সব ধরনের কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দেন নেতাদের। এরপর সড়ক ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

প্রকাশ :আগস্ট ৩০, ২০১৮ ১০:৫৫ অপরাহ্ণ