নিজস্ব প্রতিবেদক:
জনগণকে ধোকা দিতেই সরকার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বিশাল বাজেট ঘোষণা করেছে বলে মন্তব্য করেছে ছাত্রশিবির।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে শিবির নেতারা বলেন, এই জনবিরোধী বাজেটের মাধ্যমে আবারো সরকারের চরম অযোগ্যতার বহি:প্রকাশ ঘটেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণকে ধোকা দিতে ৪ লক্ষ ২ শত ৬৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষনা করা হয়েছে। এই অবাস্তব ও অতি উচ্চাবিলাষী বাজেটকে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক বাজেট বলে অভিহিত করেছে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদগণ। কেননা এ বাজেটের মধ্যে ঘাটতিই রয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে সরকার জনগনের উপর করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি সরকার অভ্যন্তরীণ খাত(ব্যাংক), ব্যাংক বহির্ভূত ও বৈদেশিক উৎস থেকে বিশাল অংকের ঋণ গ্রহণ করবে। এর সুদের বোঝাও জনগণকে বইতে হবে। ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের উপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে জনগণের পকেট কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া যেখানে চালের দাম অনেক বেশি, নিত্য প্রয়োজনিয় দ্রব্যমূল্যরি ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে মানুষের জীবন যাত্রাকে আরও দূর্বিসহ করে তোলা হয়েছে। সরকারের রাজনৈতিক বাজেটের ফলে আবারো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়তে শুরু করেছে। সুতরাং এ বাজেট যে রাজনীতির অপকৌশল ও গণবিরোধী তা ইতিমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে।
তারা বলেন, শিক্ষাখাতে গতানুগতিক বাজেট পেশ করা হয়েছে। এই খাতে বরাদ্ধ বাড়লেও তা প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে, মূল শিক্ষা খাতে নয়। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী ”শিক্ষার মানোন্নয়ন সময় সাপেক্ষ বিষয়” বলে দায়মুক্তির চেষ্টা করেছেন। মুলত শিক্ষার মানোন্নয়নের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাই বাজেটে গৃহীত হয়নি। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ কমেছে। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাছাড়া কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে অতীতে সরকার কথার ফুলঝুড়ি আওড়ালেও বাজেটে এ খাতে সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্ধ রাখা হয়নি । শিক্ষা নিয়ে বড় বড় কথা বললেও তার উন্নয়নে কার্যকর পরিকল্পনা নেই বরং শিক্ষাখাতে বৈষম্যকেই বহাল রাখা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতোমধ্যেই এই গণবিরোধী বাজেট বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ, সংস্থা, দল ও জনগণের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এ বাজেট সংশোধন করতে হবে। দেশের বৃহত্তম ছাত্রসংগঠন হিসেবে আমাদের প্রস্তাবনা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজড করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ অন্যান্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে জাতীয় উন্নয়নে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে মানসম্মত চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিত করতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তাতে শিক্ষা ব্যয় কমাতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিশ্চিত করার কার্যকরী ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি, কাঙ্খিত নাগরিক তৈরির লক্ষে পাঠ্যসূচি, পাঠ্যপুস্তক ও মেধা যাচাই পদ্ধতিসহ সামগ্রীক শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ