২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:১৪

প্রাথমিকের ১১টি প্রশ্নে ৮২টি ভুল!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৫ মিনিটে কত সেন্টিমিটার? এমন আজব প্রশ্ন করা হয়েছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার পঞ্চম শ্রেণির গণিত প্রশ্নপত্রে।

১০০ পূর্ণমানের ১১টি প্রশ্নে ৮২টি ভুলের সন্ধান মিলেছে। এ নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

শুধু গণিতে নয়, সব বিষয়েই ছিল ভুলে ভরা। এমন ভুল প্রশ্নেই ৬ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা।

এ পরীক্ষায় ১৭৭টি সরকারি ও ৪টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত প্রায় ৪২ হাজার ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়।

ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা জানান, পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্রে ১নং প্রশ্নের ‘ড’ ক্রমিকে প্রশ্ন করা হয়েছে ‘১৫ মিনিট সমান কত সে.মি?’ কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের কাছে এটি একটি আজব প্রশ্ন; যার উত্তর কারও জানা নেই। সব প্রশ্নের মানবণ্টন নেই। খ ক্রমিক প্রশ্ন অসম্পূর্ণ বাক্য। ১নং এর ঘ, ঢ, থ, ৪নং এর ক, ৫নং এর খ, ৬ এর ক, অথবা’র ক, ৮ এর গ, ১০নং ও ১০নং এর ক, অথবা’র ক, ১১নং এর খ ও গ ক্রমিকে ‘দাঁড়ি’ এর স্থলে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে।

জ্যামিতির ৬নং ক্রমিকে ১২ সেন্টিমিটারের চেয়ে ১০ সেন্টিমিটারের বাহু অঙ্কন করা হয়েছে দীর্ঘ। অঙ্কন সঠিক হয়নি, তথ্যও অস্পষ্ট। র’র আধিক্য বেশি। ভুল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে শ্রেণি, গনিত, ব্যবহৃার, শত্যব্দী, চাকুরী জীবী, মিটারে, ডে.সি এ, ডে.সি মি, তেমার, রূপান্তার, টায়ং, আধিবর্ষ, জম্ম, মিটির, ফেব্রুয়ারী, পৌছে, ম্যচের, সামান্তরীক।

১১নং সারণিতে চিত্রাঙ্কন আঁকাবাঁকা, সারণি শিক্ষার্থী ও ওজনের অংশে তথ্যবিভ্রাট রয়েছে। বানান ভুলে বদলে গেছে বাক্যে শব্দের অর্থও। যেমন আয়তের স্থলে আয়েতের, তাদের স্থলে তাদেরও, গাড়িটির স্থলে গাড়ি টি, টাকার স্থলে টাকায়, উচ্চতা এর স্থলে উচ্চতার, হতে এর স্থলে হাত, সংখ্যা এর স্থলে সংখ্যা, বোর্ড এর স্থলে বোর্ডেও, ব্যাসার্ধ এর স্থলে ব্যাসার্ধেও, সকাল এর স্থলে সকলে। পঞ্চম শ্রেণি ও তৃতীয় শ্রেণির ইংরেজি প্রশ্নেও ভুলের ছড়াছড়ি।

এ প্রসঙ্গে লেখক প্রাবন্ধিক রণজিৎ কর বলেন, ছাত্রছাত্রীদের মান যাচাইয়ের আগে প্রশ্ন প্রণয়নে জড়িতদের মান যাচাই আবশ্যক।

এমন ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ প্রসঙ্গে গাঁওগৌরীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আরফান আলী জানান, সব প্রশ্নে ছোটবড় অনেক ভুল আছে, সেগুলো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

জাগরণী পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শঙ্কর চন্দ্র চাকী বলেন, ভুল ছিল। যেগুলো সম্ভব তাৎক্ষণিক সংশোধন করে দিয়েছি। যেসব প্রশ্নে বাক্য অসম্পূর্ণ ছিল বা প্রশ্ন হয়নি, সেক্ষেত্রে নতুন প্রশ্ন দেয়া হয়েছে।

গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ফকির বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন উপহাস মেনে নেয়া যায় না। যারা সরকারের শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ে এমন খামখেয়ালিপনা করেছেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

গৌরীপুর মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, একটি শিক্ষক প্যানেল ও প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটির যাচাই-বাছাইকৃত প্রশ্নে এত ভুল! এর দায় কেউ এড়াতে পারেন না।

প্রশ্নে এত ভুল শোনে বিস্ময় প্রকাশ করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রশ্ন কমিটির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, প্রশ্ন আমরাই করেছি। তবে ভুল হয়েছে এ কথা কেউ বলেনি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেব।

প্রকাশ :আগস্ট ২০, ২০১৮ ৫:১৫ অপরাহ্ণ