২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:৪০

কলমানি মার্কেটের লেনদেন বাড়লেও সর্বনিম্ন সুদহার

অর্থনীতি ডেস্ক:
কয়েক দিন পরেই কোরবানির ঈদ। এই উৎসবের আগে পূর্ণদিবস ব্যাংক খোলা আছে মাত্র দুদিন। এ কারণে ধর্মীয় এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, কোরবানির পশু কেনাসহ অন্যান্য ব্যয় পরিচালনার জন্য ব্যাংকে নগদ টাকা তুলতে ভিড় করছেন গ্রাহকরা। টাকা তোলার বাড়তি চাপ সামলাতে নগদ টাকা ধার নিতে ব্যাংকগুলোকে যেতে হচ্ছে আন্ত ব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি মার্কেট)। ফলে পরিমাণের দিক থেকে কলমানি মার্কেটের লেনদেন বাড়লে সুদহারে তেমন প্রভাব নেই। উল্টো এই মার্কেটের সুদহার এতটাই কমেছে যে তা স্মরণকালের সর্বনিম্নে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত ১৪ আগস্ট মঙ্গলবার কলমানি মার্কেটে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়েছে। গড় সুদহার ছিল ১.৬১ শতাংশ। তবে সুদহার কমলেও লেনদেন বেড়েছে এই বাজারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘ বিনিয়োগ স্থবিরতায় অধিকাংশ ব্যাংকের কাছেই উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এ কারণে ঈদের আগে নগদ টাকার চাহিদা বাড়লেও কলমানিতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ৬ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত কলমানি মার্কেটে প্রতিদিনই লেনদেন বেড়েছে। এ সময়ে কলমানি মার্কেটে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে মোট লেনদেন হয়েছে ৫৭ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক টু ব্যাংকের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল সাড়ে ৪ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ব্যাংক টু ব্যাংকের গড় কলমানির গড় সুদহার ছিল ১.৬১ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় সুদহার ছিল ৪.৫৫ শতাংশ। গত দেড় দশকে এত কম সুদহারে লেনদেন হয়নি কলমানি মার্কেটে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের অক্টোবরে গড়ে ২.৮০ শতাংশ সুদে লেনদেন হয় এই মার্কেটে। ২০০৩ সালের পর থেকে কখনোই কলমানির সুদহার এর কম দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণের (সিআরআর) হার কমানোর ফলে বাজারে নগদ টাকার সরবরাহ বাড়ায় কলমানি সুদহার বাড়েনি বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬ আগস্ট কলমানিতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৯৫০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ১৩ আগস্ট এই লেনদেন বেড়ে হয় আট হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা, যা ১৪ আগস্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু কেনাসহ বাড়তি কেনাকাটায় নগদ টাকা তুলতে ব্যাংকগুলোতে ভিড় করে গ্রাহকরা। এ কারণে ঈদের সময় লেনদেন বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট নেই। এ কারণে লেনদেন বাড়লেও কলমানি মার্কেটে সুদহার স্থিতিশীল রয়েছে।

নগদ টাকার সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে; তাই ঈদের আগে কোনো সংকট হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

এ বছর কোরবানির আগে ব্যাংকের কলমানি মার্কেটের সুদহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকলেও ২০১০ সালে কোরবানির ঈদের আগে কলমানি মার্কেটের সুদের হার প্রায় ২০০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। তখন বেসরকারি একটি ব্যাংক ১৯০ শতাংশ হার সুদে অন্য একটি ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা ধার নিয়েছিল। এরপর অবশ্য আর কখনো কলমানির সুদের হার খুব একটা বাড়তে দেখা যায়নি। ২০১২ সালে ঈদের আগে ১৫ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ৯ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল কলমানি মার্কেটের সুদহার। এর পর থেকে কলমানির সুদহার ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে।

ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতিদিনের চাহিদা পূরণের মতো পর্যাপ্ত নগদ টাকা না থাকলে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে তাত্ক্ষণিক নগদ টাকা ধার করে গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করে থাকে। সাধারণত এক রাতের জন্য এই টাকা ধার দেওয়া-নেওয়া হয়।

প্রকাশ :আগস্ট ১৯, ২০১৮ ১২:৩২ অপরাহ্ণ