ক্রীড়া ডেস্ক:
দিন, মাস, বছর পেরিয়ে অপেক্ষা শুধুই ঘণ্টা কয়েকের। চার বছরের অপেক্ষার প্রহর শেষে আজ থেকে শুরু হচ্ছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞ এশিয়ান গেমস। জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আজ গেমসের পর্দা উঠবে।
২ সেপ্টেম্বর বাজবে বিদায় রাগিনী। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা এবং পালেমবাং শহর যৌথভাবে এবারের আয়োজক। এশিয়ার ৪৫টি দেশ পদকের লড়াইয়ে অংশ নেবে। প্রতিবারের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। ১৪টি ডিসিপ্লিনে অংশ নেবেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
নারী-পুরুষ মিলে এবার ১১৭ অ্যাথলেট বাংলাদেশ থেকে পদকের লড়াইয়ে নামবেন। তবে কোচ, প্রশিক্ষক, ম্যানেজার, প্রশাসনিক কর্তাসহ মোট ১৬৩ জনের বহর ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থান করছেন। এশিয়ান গেমসে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের ডিসিপ্লিনগুলো হলো আরচারি, অ্যাথলেটিকস, বাস্কেটবল, গলফ, ফুটবল, বিচ ভলিবল, ব্রিজ, হকি, কাবাডি, শুটিং, সুইমিং, ভারোত্তোলন, রেসলিং এবং রোইং। ফুটবল ও হকি যেহেতু দলগত ইভেন্ট, এতে সর্বাধিক সংখ্যক ২৩ ও ১৮ জন খেলোয়াড় রয়েছেন জাকার্তায়। এ ছাড়া আরচারি থেকে ১৩ জন, কাবাডি থেকে ১২, অ্যাথলেটিকস থেকে ২, বাস্কেটবল ৪, গলফ ৬, বিচ ভলিবল ২, ব্রিজ ৫, শুটিং ১৬, সুইমিং ২, ভারোত্তোলন ১, রেসলিং ৩ এবং রোইং থেকে ১ জন অংশ নেবেন।
গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মার্চপাস্টে আজ বাংলাদেশ দলের পতাকা বহন করবেন ১২তম সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এশিয়ান গেমসের পর্দা উঠলেও ফুটবল ইভেন্ট দিয়ে ইতোমধ্যে গেমস শুরু হয়ে গেছে। গত ১০ আগস্ট মাঠে গড়ায় ফুটবল। বাংলাদেশ দল মাঠে নামে ১৪ আগস্ট। প্রথম ম্যাচে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে। গ্রুপপর্বে বাংলাদেশ শেষ ম্যাচ খেলবে আগামী ১৯ আগস্ট। প্রতিপক্ষ ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক কাতার।
১৯৭৮ সালে ব্যাংকক এশিয়ান গেমস দিয়ে ‘এশিয়াডে’ পা রাখা বাংলাদেশের। গেমসে প্রথম দুই আসরে অর্থাৎ ১৯৭৮ ও ১৯৮২ (দিল্লি এশিয়ান গেমসে) কোনো পদক না জিতেই ঘরে ফেরে বাংলাদেশ। ১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়ান গেমসে পদক খরা ঘোচায় বাংলাদেশ। বক্সিং থেকে প্রথম পদক জেতে লাল-সবুজের দেশ। পুরুষ লাইট হেভিওয়েটে বাংলাদেশের মোশাররফ হোসেন ব্রোঞ্জ জেতেন।
এর পর ধারাবাহিকভাবেই পদক জিতেছে বাংলাদেশ। তবে প্রতিবার শুধু একটি ইভেন্টেই। সেটি হলো কাবাডি। তবে কাবাডিতে কখনই স্বর্ণ জেতা হয়নি। কখনো রুপা, কখনোবা ব্রোঞ্জ জিতেছে বাংলাদেশ। সবশেষ ২০১৪ ইনচিয়ন এশিয়ান গেমসে যে একটি ব্রোঞ্জ জিতেছে বাংলাদেশ, সেটিও কাবাডি থেকেই; নারীদের দলগত ইভেন্টে।
এশিয়ান গেমসে যে কখনো স্বর্ণ জেতেনি লাল-সবুজরা এমন নয়। ২০১০ সালে গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে ছেলেদের ক্রিকেট থেকে স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ। ক্রিকেট থেকে গত আসরেও পদক জিতেছিল। ছেলে-মেয়ে দুই ইভেন্টই পদক জিতেছে। তবে স্বর্ণ জিততে পারেনি। ছেলেদের ক্রিকেট দল ব্রোঞ্জ এবং মেয়েদের ক্রিকেট দল রুপা জেতে। এবারের এশিয়ান গেমসে অবশ্য ক্রিকেট নেই। তাই একটি নিশ্চিত পদক শুরুতেই হাতছাড়া হয়ে গেছে বাংলাদেশের! তবে কাবাডি, আরচারি ও শুটিং থেকে পদক জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজাও বলেছেন এই তিন ইভেন্ট থেকে পদক জয়ের কথা। সঙ্গে যোগ করেছেন প্রথমবার এশিয়ান গেমসে অংশ নেওয়া ব্রিজ ইভেন্টেরও। বর্তমানে আরচারি খুবই ভালো করছে। কয়েক বছর ধরে ঘরে-বাইরে থেকে সাফল্য বয়ে আনছেন বাংলার আরচাররা। এবারের এশিয়ান গেমসেও ভালো করবে দল ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগে বলে গেছেন দেশসেরা আরচার রোমান সানা (রিকার্ভ ইভেন্ট)। প্রথমবার এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আরচারির কম্পাউন্ড ইভেন্ট।
এই ইভেন্টে সেরা বাংলাদেশের আবুল কাশেম মামুনও পদক জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করে গেছেন। শুটিংয়ে ভালো করার কথা জানিয়েছেন আব্দুলাহ হেল বাকী, অর্নব শারার লাদিফরা। একইভাবে কুস্তিতে শিরিন আক্তার, ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার সীমান্তরাও এশিয়ান গেমসে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। হকিতে ওমানকে হারানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন অধিনায়ক ফরহাদ আহমেদ সিটুল।
এশিয়ান গেমস সামনে রেখে দীর্ঘ অনুশীলন ক্যাম্প করে গেছেন বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। দেশে তো করেছেনই, এমনকি দেশের বাইরে গিয়েও অনেক ইভেন্টের প্রতিযোগীরা অনুশীলন ক্যাম্প করেছেন। এখন গেমস থেকে তারা কতটুকু সাফল্য বয়ে আনেন, সেটাই দেখার।
আসর : ১৮তম
দেশ : ইন্দোনেশিয়া, জাকার্তা
সময়কাল : ১৮ আগস্ট- ২ সেপ্টেম্বর
ইভেন্টের সময় : প্রতিদিন সকাল ৭টা ৩০ মিনিট
ভেন্যু : জাকার্তা ও পালেমবাং
বাংলাদেশ অংশ নেবে : ১৪ ডিসিপ্লিনে
ব্রডকাস্ট : সনি টেন (১, ২, ৩ ও এইচডি)
অংশগ্রহণকারী দেশ : ৪৫টি
মূল ভেন্যু : গেলোরা বাং কারনো মেইন স্টেডিয়াম
মোটো : এনার্জি অব এশিয়া