তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:
চান বা না-চান, মোবাইলে লোকেশন সার্ভিস চালু রাখুন বা না-রাখুন, একেবারে ‘ল্যাটিচিউড-লঙ্গিচিউড’ ধরে মোবাইলধারীর লোকেশন দিন-রাত তাদের অ্যাকাউন্টে রেকর্ড করছে গুগল। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) দাবি, নজরদারির বহর এতটাই যে আপনার অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বা আইফোনে ইন্টারনেট চালু থাকলে, যেকোনো সময় গ্রাহকের অবস্থান একেবারে বর্গফুট পর্যন্ত নিখুঁতভাবে তোলা থাকে গুগলের খাতায়। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন এতসব নজরদারি চালাচ্ছে গুগল?
এপি-র পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তথ্যগুলো একাধিক সংস্থাকে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা রোজগার করছে গুগল।
হাঁপিয়ে যাচ্ছেন, এবার নিজে গুগল অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করে (https://adssettings.google.com/authenticated) ওয়েবপেজে ঢুকে দেখুন। দেখে চমকে যাবেন, আপনার বয়স-লিঙ্গ-শখ-শিক্ষা-রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস’সহ একাধিক ব্যক্তিগত তথ্য বিচার করে সাজিয়ে-গুছিয়ে আপনার জন্য ‘পার্সোনালাইজড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট প্রোফাইল বা সাইকোগ্রাফিক প্রোফাইল’ বানিয়ে রাখার পুরো বন্দোবস্ত করে রেখেছে গুগল।এটি ইচ্ছামতো ব্যবহার করা যায়। শুধু ইন্টারনেটে সার্চই নয়, আপনি থার্ড পার্টি অ্যাপ যেভাবে ব্যবহার করেন, তার সব তথ্যও রয়েছে (https://myaccount.google.com/permissions?pli=1) গুগলের ভাঁড়ারে।
বাস্তবে ইন্টারনেটে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় বা মোবাইলে থার্ড পার্টি অ্যাপ ইনস্টল করার সময় গুগলকে কোন কোন সম্মতি আপনি দিয়ে দেন তাড়াহুড়োয় ‘ক্লিক’ করে, তা কি আপনি নজর করেন?
শতকরা ১০০ ভাগ মানুষই ওই ফাইন-প্রিন্ট পড়ার হ্যাপায় না গিয়ে তা করেন না। ফলস্বরূপ তাদের মাধ্যমে গুগল এমন খুঁটিয়ে যার উপর খুশি নজর রাখতে পারে পিছনে গোয়েন্দা লাগিয়েও কারও সম্পর্কে এত তথ্য এক লহমায় জানা সম্ভব নয়। অনেকে অজান্তেই বা জেনেবুঝে তার অ্যাকাউন্টে বা স্মার্টফোনে গুগল ম্যাপের লোকেশন সার্ভিস ‘অন’ করে রেখে দেন৷ ফলে যেটা হয়, আপনি যেখানে যেখানে যাচ্ছেন, গুগলের একটি নির্দিষ্ট পেজে (https://www.google.com/maps/timeline?pb) তা রেকর্ড হয়ে থাকে৷ যাওয়া-আসা গৌণ, লোকেশন অন থাকা অবস্থায় কীভাবে কতটা পথ গেছেন, গাড়িতে ও হেঁটে তাও রেকর্ড করে গুগল৷ সংস্থার পক্ষে প্রক্রিয়াগত দাবি, লোকেশন সার্ভিস কোনও গ্রাহক ‘অফ’ করে দিলে আর সেই তথ্য রেকর্ড করে না গুগল।
কিন্তু চাঞ্চল্যকর এক তদন্তে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) দাবি, গুগলের এই দাবি সর্বৈব মিথ্যা। আপনার অনুমতি ছাড়াই যতবার গ্রাহক তার স্মার্টফোনে ‘গুগল ম্যাপ’ অ্যাপটি খোলেন সেই মুহূর্তে আপনি যেখানে আছেন, সময় রেকর্ড করে সেই লোকেশন-এর একটি ‘স্ন্যাপশট’ তুলে নিয়ে নিজের ভাড়াঁরে জমা করে নেয় গুগল। এতো না হয় গুগল ম্যাপ সম্পর্কিত। ম্যাপ ছাড়াই শুধু গুগল ব্রাউজারে বিশেষ কিছু ‘কী-ওয়ার্ড’ (যেমন, ‘চকোলেট চিপ কুকিজ’ বা ‘কিডস সায়েন্স কিটস’) দিয়ে সার্চ দিলেও মোবাইলধারীর লোকেশন দেখে নেয় গুগল বলে জানিয়েছে এপি। তাদের আরও দাবি, বর্গফুট পর্যন্ত নিখুঁত থাকে এই লোকেশন রেকর্ড। আর এর ফলে বিশ্বজুড়ে ২০০ কোটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন এবং অসংখ্য আইফোন গ্রাহক গুগল ব্যবহার করেন, তাদের লোকেশন তথ্য চুরি করছে গুগল।
এপির এই তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে গুগলকে প্রশ্ন করা হলে, তাদের মুখপাত্র যথারীতি দায় সেরেছেন এই বলে ‘লোকেশন হিস্ট্রি, ওয়েব ও অ্যাপ অ্যাক্টিভিটি এবং ডিভাইস লেভেল লোকেশন সার্ভিসের মতো একাধিক পরিষেবার মাধ্যমে গুগল তাদের অ্যাকাউন্টধারীর লোকেশন এবং গুগল ব্যবহারের অভিজ্ঞতা প্রতিনিয়ত উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। এগুলো করা হয় গ্রাহকস্বার্থেই। তবে যে কেউ ইচ্ছা করলে এগুলো যখন খুশি আলাদা আলাদা ভাবে বন্ধ করে দিতেই পারেন।’