অর্থনীতি ডেস্ক:
প্রবাসী আয়ের মত রপ্তানি আয়েও সুখবর নিয়ে শুরু হল ২০১৮-১৯ অর্থবছর।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি থেকে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে এসেছে। পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশের মত।
‘শুরুটা খুব ভালো হল’ মন্তব্য করে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “কারখানাগুলোর উন্নয়নে পোশাক শিল্প মালিকরা গত কয়েক বছরে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কষ্টও করেছেন। ৮০ শতাংশের বেশি কারখানা উন্নত কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) আওতায় চলে এসেছে। এতে বায়াররাও খুশি।”
মূলত এ কারণেই বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে এবং ক্রয় আদেশ ও রপ্তানি বেড়েছে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সহসভাপতি।
শুরুটা যেমন ‘ভালো’ হলো, শেষটাও ‘তেমন’ হওয়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “গত অর্থবছরের মত চলতি অর্থবছরেও পোশাক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হবে বলে আমার বিশ্বাস। লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম করবে।”
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক জায়েদ বখত বলেন, “এক মাসের তথ্য দিয়ে বলা যাবে না পুরো অর্থবছর কেমন যাবে। তবে শুরুটা বেশ ভালোই হয়েছে।”
মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩৫৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার আয় করেছে।
এই অংক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ১৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম মাসে ২৯৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।
জুলাই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। এই মাসে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাইয়ে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ২৫ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।
অর্থাৎ ৩৫৮ কোটি ১৫ লাখ ডলারের মধ্যে ৩০১ কোটি ৭৭ লাখ ডলারই এ খাত থেকে এসেছে। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ১৫২ কোটি ৭১ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
উভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৪৯ কোটি ডলার; প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে জুলাইয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৫ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল বেড়েছে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশ। হস্তশিল্প থেকে আয় বেড়েছে ১১ শতাংশ।
এছাড়া প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ১৩ শতাংশ, তামাক ৯৭ শতাংশ, শাকসবজি ৪৭ শতাংশ এবং শুকনো খাবার রপ্তানি ১৩৪ শতাংশ বেড়েছে।
তবে হিমায়িত মাছ রপ্তানি ৩১ শতাংশ কমেছে। চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ২২ শতাংশ। চা রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।
৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ (৩৬.৬৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।
সার্বিক রপ্তানি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বাড়লেও তা ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২২ শতাংশ কম।
মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানির উপর ভর করেই গত অর্থবছর ওই প্রবৃদ্ধি হয়। মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ আসে এই খাত থেকেই।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে ৩৯ বিলিয়ন (৩ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।
এবার দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাত থেকে ৩২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার আসবে বলে ধরা হয়েছে, যা মোট রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৩১ কোটি ৭০ লাখ (১.৩১ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।