ক্রীড়া ডেস্ক:
খেলা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগেই বাংলাদেশের পতাকা হাতে স্টেডিয়ামে উপস্থিত একদল দর্শক। কারও হাতে বিশাল বড় পতাকা। কেউ এনেছে প্লাস্টিকের লাঠিতে লাগানো ছোট আকৃতির লাল-সবুজের পতাকা। ভুটানের বাংলাদেশি দূতাবাসের একদল কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু বাঙালি পর্যটকও ছিলেন গ্যালারিতে। এঁদের সঙ্গে চিৎকার করে সারাক্ষণ গলা মিলিয়েছেন ভুটানে কর্মরত কয়েক শ বাঙালি শ্রমিক। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামের হাজারখানেক দর্শক আজ সন্ধ্যায় মুগ্ধ হয়েই উপভোগ করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ দলের মেয়েদের ফুটবল।
ম্যাচ শেষে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে গ্রুপের শেষ ম্যাচে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে অবশ্য বেশ স্বস্তি নিয়েই হোটেলে ফিরেছে বাংলাদেশ। দিনের অন্য ম্যাচে ভারত ১-০ গোলে হারিয়েছে ভুটানকে। বাংলাদেশের একটি গোল করেছে তহুরা খাতুন। মারিয়া মান্দাকে দিয়ে করিয়েছে আরেকটি গোল। ম্যাচের তৃতীয় গোলটি করেছে সাজেদা খাতুন।
এই জয়ে ‘বি’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে উঠল মারিয়া-আঁখিরা। ১৬ আগস্ট দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাংলাদেশ খেলবে ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ ভুটানের সঙ্গে। একই দিনে প্রথম সেমিফাইনালে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ভারতের মুখোমুখি হবে ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ নেপাল।
আগের ম্যাচে দুর্বল পাকিস্তানের জালে ১৪টি গোল দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কাল নেপালের বিপক্ষে গোল পেতে বেশ কষ্টই হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েদের। নেপালি ডিফেন্ডারদের কড়া মার্কিংয়ে বারবার খেই হারিয়েছে তহুরা-সাজেদারা। অথচ শুরুর দুই মিনিটেই হতে পারত দুটি গোল! দুটো সহজ সুযোগ শুরুতে নষ্ট করে শামসুন্নাহার সিনিয়র।
গত বছর কমলাপুরে সাফের এই টুর্নামেন্টেই নেপালকে ৬-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবারের নেপাল দল যে সহজে ছেড়ে কথা কইবে না, সেটা বোঝা গিয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের খেলা দেখেই। গতিতে যদিও নেপালিদের চেয়ে বাংলাদেশের মেয়েরাই এগিয়ে ছিল, কিন্তু সেই গতি কাজে লাগিয়ে সেভাবে গোল বের করতে পারেনি। ম্যাচের ২৫ মিনিটে শামসুন্নাহারের ক্রসে পা ছোঁয়ালেই চলত সাজেদার। কিন্তু বলে পা লাগাতেই পারেনি এই ফরোয়ার্ড।
বাংলাদেশের মেয়েদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত অবশ্য পেরে ওঠেনি নেপালিরা। প্রথমার্ধে যতই সমানে সমানে খেলুক না কেন, দ্বিতীয়ার্ধে দম ফুরিয়ে গেছে নেপালিদের। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নিয়মিত খেলা বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাটাও কাজে এসেছে কাল। ম্যাচের প্রথম গোলটি এসেছে প্রথমার্ধের যোগ হওয়া সময়ে। মারিয়া মান্দার ক্রস থেকে পাওয়া বল বক্সের মধ্যে দাঁড়ানো আঁখি বাড়িয়ে দেয় তহুরাকে। জটলার মধ্যে তহুরার সুযোগসন্ধানী শট খুঁজে নেয় নেপালের জাল। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সব মিলিয়ে ২৮ গোল করল কলসিন্দুরের মেয়ে।
বাংলাদেশের মাঝমাঠের প্রাণভোমরা মণিকা ও মারিয়া কিছুক্ষণ যেন খেই হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু একটা গোল পেতেই আবারও তারা ফিরেছে ছন্দে। ৫২ মিনিটে তহুরার ক্রস, মারিয়া মান্দার জোরালো শটে স্কোর ২-০। এরপর ৬২ মিনিটে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়া সাজেদা জটলা থেকে পেয়ে যায় তৃতীয় গোল।
ড্র করলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু ড্র নয়, জয় নিয়েই হয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের মুখে তাই ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে ছিল স্বস্তির হাসি, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ যে আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমেছিলাম সেটা হয়েছে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে উঠেছি। আমাদের মেয়েরা স্বাভাবিকভাবেই খেলেছে। ওরা ৯০ মিনিট একই ছন্দে খেলেছে। প্রথমার্ধে নেপাল সমানতালে খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের মেয়েদের ফিটনেসের সঙ্গে ওরা কুলিয়ে উঠতে পারেনি। ওই সময় ওরা মনোযোগ হারিয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের মেয়েরা জয় তুলে নিয়েছে।’
বাংলাদেশ দল: মাহমুদা, আনাই, শামসুন্নাহার সিনিয়র, নাজমা, আঁখি, নীলা (ইলামণি), মণিকা, মারিয়া, আনুচিং (ঋতুপর্ণা), তহুরা (শামসুন্নাহার জুনিয়র), সাজেদা।
গোলদাতা: (তহুরা খাতুন ৪৫+ মি., মারিয়া মান্দা ৫২ মি., সাজেদা খাতুন ৬৭ মি.)