২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:০৯

দুই মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ

অর্থনীতি ডেস্ক:
রমজানের শেষ দিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ঈদের পরেও বহাল ছিল এ দাম। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। দুই মাসের ব্যবধানে দাম বেড়ে হয় দ্বিগুণ। খুচরা বাজারে গতকাল ৬০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয় প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ। বিক্রেতাদের আশঙ্কা আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। এমন আশঙ্কার মধ্যেই বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের পর দাম কমে যাবে। ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে পেঁয়াজের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের মানুষ যখন ত্যক্ত-বিরক্ত ঠিক তখনই গণমাধ্যমে দেয়া মন্ত্রীর এ বক্তব্যকে তামাশা বা মশকরা হিসেবে দেখছেন সংক্ষুব্ধরা।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পেঁয়াজের বাজারমূল্য ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ২০১৬ সালে রোজার আগে সরকার পেঁয়াজের ওপর থেকে আমদানি শুল্ককর প্রত্যাহার করে। এরপর আর শুল্ককর সংযোজন হয়নি। তবে অতিরিক্ত লাভ করতে বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের রফতানি মূল্যে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে ২০৫ মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশী টাকায় যা ১৭ হাজার ২০০ টাকা। এই হিসাবে কেজিপ্রতি আমদানি খরচ পড়ছে ১৮ টাকা। এলসি খরচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত পেঁয়াজ পৌঁছতে খরচ পড়ছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। অথচ আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। খুচরা বাজারে এসে বাড়ছে আরো অন্তত ৫ টাকা।

ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন দেশী পেঁয়াজেরও। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে গতকাল দেশী পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকায় পৌঁছেছে। অথচ এ বছর আবহাওয়া বেশ ভালো। পেঁয়াজের ফলনও হয়েছে গত বছরের চেয়ে প্রায় দেড় লাখ টন বেশি। গত বছর যেখানে সারা দেশে ১৮ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছিল, সেখানে এ বছর উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন।

বিভিন্ন পর্যায়ের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে পেঁয়াজের কোনো সঙ্কট নেই। সরবরাহও প্রচুর। ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে অন্যবারের চেয়ে বেশি। ভারতের বাজারেও দাম সহনীয়। বৈরী কোনো আবহাওয়ায় বাংলাদেশ এবং ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহতও হয়নি। মজুতও ফুরিয়ে যায়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো আশঙ্কাও নেই। তার পরও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। কোরবানির সময় পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সুবাদে তারা কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরকারের নির্লিপ্ততার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাজার বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, সরকার শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দিলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। তবে আমদানিকারকেরা বলছেন, ভারত থেকে উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কারণে দাম বেড়েছে। তারা জানান, ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ভারত দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা জানান, ভারত থেকে নাসিক, হাসখালি, বেলেডাঙ্গা ও খড়কপুর জাতের পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। তবে দেশে নাসিক জাতের পেঁয়াজের চাহিদা বেশি।
দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলি স্থলবন্দর সূত্র জানায়, পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিখ্যাত এ বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি বেড়ে দ্বিগুণ হলেও কোরবানির ঈদের অতিরিক্ত চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২২ থেকে ২৪ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৯ থেকে ৩১ টাকা কেজিতে।০ এ বন্দর দিয়ে আগে গড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। গত শনিবার থেকে গত বৃহস্পতিবার এই ছয় দিনে বন্দর দিয়ে ৩৬৫টি ট্রাকে সাত হাজার ৩০০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

দাম বেড়েছে ভারতেও
এ দিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। গত শুক্রবার থেকে টনপ্রতি ৫০ ডলার করে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। গত শনিবার থেকে বাড়তি মূল্যেই পেঁয়াজের এলসি খুলেছেন আমদানিকারকেরা। পেঁয়াজ আমদানিকারক আবদুল মালেক জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ায় বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকেরা। পেঁয়াজ রফতানিতে ন্যূনতম রফতানিমূল্য নির্ধারণ না থাকায় পূর্বে বন্দর দিয়ে প্রতি টন পেঁয়াজ আমদানি করা হতো ২০০ থেকে ২৫০ ডলার মূল্যে। বর্তমানে দেশের বাজারে পেঁয়াজের বাড়তি চাহিদা ঘিরে দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যবাসয়ীরা। শুক্রবার থেকে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য টনপ্রতি ৫০ ডলার করে বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। দেশের বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে বাড়তি মূল্যেই পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। তবে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য বাড়ার কারণে দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

ঈদের পর দাম কমে যাবে : বাণিজ্যমন্ত্রী
এ দিকে ঈদের পর পেঁয়াজের দাম কমে যাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতে অতিবৃষ্টির কারণে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারে তার একটা প্রভাব এবং ঈদের একটা প্রভাব পড়েছে। আশা করছি ঈদের পর পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।

প্রকাশ :আগস্ট ১৩, ২০১৮ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ