২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৩০

ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন: আওয়ামী লীগের ‘আঁতুড়ঘর’ কিনে নিচ্ছে সরকার

বিশেষ প্রতিবেদক:
পুরান ঢাকার যে ভবনে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন কিনে নিচ্ছে সরকার। পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত ব্যক্তিমালিকানাধীন ওই বাগানবাড়ি কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ ২ হাজার ৯০০ টাকা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন পায়। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন অনুসারে সরকার ‘সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে’ বর্তমান মালিকদের কাছ থেকে রোজ গার্ডেন কিনবে।

হৃষিকেশ দাস নামের এক ব্যবসায়ী ১৯৩১ সালে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর ওই বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। পশ্চিমমুখী ওই দোতলা বাড়ির চারপাশ ঘিরে গড়ে তোলেন বিভিন্ন দেশ থেকে আনা দুর্লভ প্রজাতির গোলাপের বাগান। সেই থেকে এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন’।
গ্রিকশৈলী অনুসরণে তৈরি সাত হাজার বর্গফুট আয়তনের ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে বড় একটি জলসা ঘর, যার মেঝে শ্বেতপাথরের আর সিলিংয়ে সবুজ কাচ দিয়ে তৈরি ফুলের নকশা। হৃষিকেশ তার গোলাপ বাগান সাজিয়েছিলেন দেশ-বিদেশ থেকে আনা হরেকরকম পাথরের ভাস্কর্য আর সুদৃশ্য ফোয়ারা দিয়ে, সামনেই শান বাঁধানো পুকুর। নির্মাণের পর থেকেই রোজ গার্ডেন হয়ে ওঠে ঢাকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
কিন্তু রোজ গার্ডেন নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই দেউলিয়া হয়ে যান হৃষিকেশ দাস। ১৯৩৬ সালে ঢাকার বই ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছে ওই সম্পত্তি বিক্রি করে দেন তিনি।

কাজী আবদুর রশীদ সেখানে প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণের সাক্ষী হয় রোজ গার্ডেন। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে এ দলের নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে এ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসে।

মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছ থেকে ১৯৬৬ সালে রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তার বড় ভাই কাজী হুমায়ুন বশীর। এ কারণে সে সময় ভবনটি ‘হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালে বেঙ্গল স্টুডিও ও মোশন পিকচার্স লিমিটেড রোজ গার্ডেন প্যালেসের ইজারা নেয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালে রোজ গার্ডেনের অধিকার ফিরে পান কাজী আবদুর রশীদের মেজো ছেলে কাজী আবদুর রকীব। ১৯৯৫ সালে তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী লায়লা রকীব ওই সম্পত্তির মালিক হন।

প্রকাশ :আগস্ট ৯, ২০১৮ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ