২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:২৬

দূরপাল্লার বাসও বন্ধ

ডেস্ক রিপোর্ট:

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ‘নিরাপত্তাহীনতার’ অজুহাতে রাজধানীতে বন্ধ রাখা হয়েছে গণপরিবহন। একই কারণে সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। শুক্রবার সকাল থেকেই তারা নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত তুলে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘটে নেমেছেন।
এদিকে হঠাৎ করে বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকেই বাস স্ট্যান্ডে এসে গন্তব্যে যেতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। তবে মোটর শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

রাজশাহী

রাজশাহী থেকে সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। সড়কে নিরাপত্তার শঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান নেয়ার অভিযোগ তুলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মালিপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে বাস মালিকেরা। তবে বাসের নিরাপত্তার কারণে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে বাস বন্ধের খবরে পথে নেমে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়ে বিকল্প যানে চাপছেন কেউ কেউ। বাস বন্ধ থাকায় চাপ বেড়েছে বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনে। আসন না পেলেও অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন অনেকেই।

যাত্রী ভোগান্তিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনজুর রহমান পিটার। তিনি অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল একটি গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে। তারা বাসে ভাঙচুর চালাচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে তারা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে রাতে বাস চলবে।

রংপুর

দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে নিরাপত্তার অভাবে রংপুরে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা। শুক্রবার সকাল থেকে জেলার কোনো রুটেই বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে কার নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে সে ব্যাপারে সরাসরি দায় নিচ্ছেন না পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
সরজমিনে কামারপাড়া ঢাকা বাস স্ট্যান্ড, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, কুড়িগ্রাম ও সাতমাথা বাস স্টান্ড ঘুরে দেখা যায় আন্তঃজেলাসহ দূরপাল্লার সকল বাসচলাচল বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকেই স্ট্যান্ডে এসে বাস না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আবু আজগর আহমেদ পিন্টু বলেন, বাস বন্ধের ব্যাপারে আমাদের সমিতির সঙ্গে কেউ কথা বলেনি। তবে আমার যেটা ধারণা নিরাপত্তাজনিত কারণেই হয়তো চালকরা বাস চালাচ্ছেন না।

প্রতিদিন ঢাকা-রংপুর রুটে চলাচল করে এসআর ট্রাভেলসের ২০টি বাস। একটি বাসের চালক খাদেমুল বলেন, একটি বাসের মূল্য কয়েক লাখ টাকা। বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে রংপুর আসার পথে রাস্তায় বাস আটকিয়ে আমাদের চরমভাবে লাঞ্ছিত করেছে আন্দোলনকারীরা। বগুড়ায় বাসে আগুন দেয়ারও চেষ্টা করেছিল। অনুরোধ করে রক্ষা পেয়েছি। পথে নিরাপত্তা নাই। তাই বাস চালাচ্ছি না।

মেহেরপুর

মেহেরপুরে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন শ্রমিকরা। যাত্রী, চালক এবং গাড়ির নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে বাস বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা। অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে।

মেহেরপুর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান জানান, কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে সকাল থেকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর- মুজিবনগরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। দূরপাল্লার কোনো বাস সকাল থেকে ছেড়ে যায়নি। কেন্দ্র থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।

সিরাজগঞ্জ

যানবাহন ভাঙচুরের প্রতিবাদে সিরাজগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে মালিক-শ্রমিকরা সংগঠন। শুক্রবার সকাল থেকে এ ধর্মঘট শুরু হয়। জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেজবাহুল ইসলাম লিটন বলেন, আমাদের যানবাহন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত কেউ রাস্তায় গাড়ি বের করবে না।

জেলা মোটর-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী জানান, দেশব্যাপী ছাত্র-আন্দোলনের নামে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ১৫টি ট্রাক, ৫টি বাস, ৩টি সিএনজি অটোরিকশা ও ২টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জে শুক্রবার সকাল থেকে আন্তঃজেলার সকল সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

জেলা মোটর-মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খশুভ্র রায় জানান, নিরাপত্তার কারণে শুক্রবার ভোর থেকে সবধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।

বগুড়া

বগুড়া থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাস মালিকরা। শুক্রবারও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।

বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, চালকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের বাস চালানোর জন্য বলা হলেও তারা বাস চালাচ্ছে না। তারা বলছে তাদের দাবি আছে। সেই দাবিগুলো সরকার মেনে নিলে বাস চলাচল শুরু হবে।

বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মাহবুবর রহমান মানিক বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সকল বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাস চালকরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে চাইছে না। শুধু চালকের না, যাত্রীরাও নিরাপদ বোধ করছে না। এ কারণে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রাজধানীর কুরমিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে জাবালে নূর বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থেকে দূর পাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

নিরাপত্তার স্বার্থে শুক্রবার সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার কোনো রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, বাস ও চালকদের নিরপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘরস্থ পৌর বাস টার্মিনাল ও পৈরতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অভিমুখে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সেলিম মিয়া জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে বাস না চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের নির্দেশনা হয়েছে এবং চালকরাও বাস চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এর ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চালাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

জয়পুরহাট

ঢাকায় পরিবহন ভাঙচুরের প্রতিবাদে জয়পুরহাটে শুক্রবার সকাল থেকে মালিক-শ্রমিকদের ডাকে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।

পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জানান, ঢাকায় বিভিন্ন পরিবহনে ভাঙচুর করছে শিক্ষার্থীরা। এতে শ্রমিক ও মালিকদের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে জয়পুরহাট থেকে দূরপাল্লা ও আঞ্চলিক বাস চলাচল বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছে তারা।

জেলা বাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান বেদারুল ইসলাম বেদিন জানান, পরিবহনের নিরাত্তার জন্য অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

শ্রীপুর (গাজীপুর)

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রয়েছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার যাত্রীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে লেগুনা ও পিকআপে করে গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। আবার ময়মনসিংহগামী লোকাল বাস ও লেগুনাগুলো ভালুকা ও ত্রিশাল পর্যন্ত যাচ্ছে।

বাসের চালকরা জানিয়েছেন, ছাত্র আন্দোলন থাকায় শ্রমিক নেতারা ময়মনসিংহে বাস ঢোকাতে বারণ করছেন।

গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ আহমেদ জানান, গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে সকাল থেকেই গণপরিবহন চলাচল সীমিত হওয়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পড়েছেন।

পটুয়াখালী

সড়কের যানবাহন চলাচলে নিরাপত্তা প্রদানের দাবিতে পটুয়াখালী থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পটুয়াখালী বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতি। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার সকাল থেকে সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রী ও কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা অনেকটা বিপাকে পড়েন।

পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা জানান, গত কয়েক দিনে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রুটের বাস চলাচলে যেভাবে বাধা দিচ্ছে এবং গাড়ি ভাঙচুর করছে তাতে সড়কে বাস চালানো সম্ভব নয়। তাই আজ ভোর থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ আন্দোলন শেষ হলে আবারও বাস চলচল শুরু করা হবে।

প্রকাশ :আগস্ট ৩, ২০১৮ ৪:৪২ অপরাহ্ণ