জেলা সংবাদদাতা:
রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বরিশালে একই দলের প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সিলেটে এগিয়ে আছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।
বাসসের খবরে বলা হয়, খায়রুজ্জামান লিটন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৯৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৪৯২ ভোট। এ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান এই সিটির ১৩৮টি ভোটকেন্দ্রের সব কটির ফলাফল ঘোষণা করেন।
এদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান রাত ১২টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, মোট ১২৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৭টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ পেয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোট। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. মজিবর রহমান সরোয়ার পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট। বাকি ১৬ কেন্দ্রের মোট (৩১,২৭৭) ভোটারের চেয়ে বেশি ভোটে সাদিক আবদুল্লাহ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এ কারণে সাদিক আবদুল্লাহকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিটিতে বিএনপির প্রার্থী ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার চার ঘণ্টা পর ভোট বর্জন করেন।
সিলেটে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী এগিয়ে আছেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর থেকে ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে ১৩৪ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৩২ কেন্দ্রে আরিফুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান (নৌকা) পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। আরিফুল ৪ হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন।
সিলেট অন্য দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। স্থগিত কেন্দ্র দুটিতে মোট ভোট ৪ হাজার ৭৮৭। এ নির্বাচনে ১০ হাজার ৯৫৪ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান জানান, সিলেটে মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৪টি। এর মধ্যে স্থগিত হওয়া দুটো কেন্দ্রের (২৪ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী বুরহানউদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) ভোটার ৪ হাজার ৪৮৭। এ হিসেবে আরিফুল হককে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করতে ১৬১ ভোটের প্রয়োজন ছিল। নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৬টি। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৭ হাজার ৩৬৭ ভোট। মোট বৈধ ভোট ১ লাখ ৯১ হাজার ২৮৯।
সোমবার বিকেল চারটায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী একপ্রকার হতাশার সুরেই নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলেন। দিনভর ভোটগ্রহণে নানা অভিযোগ করেন সদ্যবিদায়ী এই মেয়র। বিএনপির পক্ষ থেকে সোমবার দুপুরের দিকে অভিযোগ করা হয়, অন্তত ৪১টি কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা। তাঁরা বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও জানানোর কথা বলেন। বিএনপি প্রার্থীর বক্তব্য এবং অন্য দুই সিটির নির্বাচনের পরিস্থিতি দেখে এমন ধারণা অনেকের মধ্যে সৃষ্টি হয়, হয়তো সিলেটও শাসক দলের দখলে যাবে। তবে ফলাফল ঘোষণার শুরু থেকেই চমক দেখা যায়। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে দুটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে এগিয়ে যান আরিফুল হক চৌধুরী।
অনানুষ্ঠানিক উৎস থেকে পাওয়া ভোটের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। ভোট ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলই চূড়ান্ত। তবে বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া ফলাফলের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলাফলে পার্থক্য হয় না। কখনো কখনো প্রাপ্ত ভোটের সামান্য হেরফের হয়, যদিও তা জয়-পরাজয় নির্ধারণে ভূমিকা রাখে না।
সোমবার একযোগে এই তিনি সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, জাল ভোটসহ নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এ ভোটগ্রহণ চলে।