২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:১৪

পারকিনসন্স রোগ: একটি নীরব ঘাতক

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

প্রতি বছরে পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৬ শ’ বাংলাদেশি। মস্তিষ্কের প্রাণঘাতী রোগের মধ্যে পারকিনসন্স ডিজিজ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। এই হার আরো বাড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশে অত্যাধুনিক ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন পদ্ধতি নিয়ে এসেছে নতুন এক চিকিৎসা অধ্যায়। এই পদ্ধতিকে মানুষের মধ্যে আরো পরিচিত করে তুলতে ইন্টারন্যাশনাল ব্রেইন রিসার্চ অর্গানাইজেশন ও বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী বিশেষজ্ঞ সম্মিলনী। ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধানমণ্ডির ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত সম্মিলনীতে থাকছে ১৪টি লেকচার সেশন, দুটি লাইভ ডেমনস্ট্রেশন, তিনটি ডিসকাশন, আর একটি মিনি কনফারেন্স।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ও এইমস ল্যাবের পরিচালক ড. খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন ওই সম্মিলনী উপলক্ষে বলেন, ‘মানুষের মস্তিষ্ক এক বিস্ময়ের আধার। আমাদের কাছে এখনো মস্তিষ্ক সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা। মস্তিষ্কের ছোট ছোট সমস্যাও বিরাট হয়ে প্রভাব ফেলে আমাদের সারা শরীরে। মস্তিষ্কের রোগ নিয়ে গবেষণা তাই চলছে অবিরামভাবে।

স্ট্রোক, মাইগ্রেন, ব্রেইন টিউমারসহ অন্যান্য রোগ নিয়েও চলছে গবেষণা। এর সঙ্গে বহুল আলোচিত পারকিনসন্স ডিজিজের প্রকোপ চলছে। বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ এ রোগে ভুগছে। পারকিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত রোগীর চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ কমে যায় আস্তে আস্তে। আরো ভয়ংকর হলো, এই রোগের কোনো নিরাময় নেই, কেবল রয়েছে রোগের লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু পদ্ধতি। এসবের মধ্যে শুরুর পদ্ধতি হলো ওষুধ। এরপর নিউরোলজিস্ট আর নিউরোসার্জনরা ঝুঁকেছেন সার্জারির দিকে। পারকিনসন্স ডিজিজে আক্রান্ত রোগীর জন্য সার্জারির প্রক্রিয়া দুটি—প্রথমটি হলো লিজিয়ন থেরাপি, আর দ্বিতীয়টি হলো ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন। তবে এই ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন পদ্ধতিই এখন বিশ্বব্যাপী বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

পারকিনসন্স রোগ কি ?
পারকিনসন্স রোগ এক ধরনের স্নায়বিক রোগ। এ রোগের সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি। মস্তিষ্কের সাবস্টেনশিয়া নিগ্রা নামক স্থানে ডোপামিনযুক্ত স্নায়ু ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে এ রোগ দেখা দেয়। সাধারণত বেশি বয়সিরা এ রোগে আক্রান্ত হন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগে আক্রান্তের হার বাড়ে। বংশে কারও এ রোগ থাকলে আক্রান্তের হার ৪-৬ গুণ বেড়ে যায়। এছাড়া যারা আগাছা ও পোকামাকড় দমনের ওষুধ ছিটানোর কাজে জড়িত, তাদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশি বলে গবেষণায় জানা গেছে।

লক্ষণ

  • শুরুতে লক্ষণ বোঝা যায় না।
  • সাধারণত হাতের কাঁপুনির মাধ্যমে এ রোগ প্রকাশ পায়।
  • ক্রমেই তা বাড়তে থাকে।
  • কোনো কাজের সময় কাঁপুনি বেশি হয়।
  • তবে বিশ্রামের সময় কাঁপুনি এ রোগের অন্যতম লক্ষণ । তা হাঁটাচলার সময়ও দেখা দেয়। হাঁটা শুরু করতে দেরি হয়। সামনের দিকে ঝুঁকে ছোট ছোট পায়ে হাঁটতে থাকে।
    মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়।
  • এ রোগে আক্রান্তদের চেহারা দেখে মনে হবে, তাদের কোনো ইমোশন নেই। গলার স্বর ভারী ও মনোটোনাস হয়। কথায় জড়তা ভর করে।
    বিষণ তায় বেশি ভোগে।
    চিকিৎসা : এ রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই। রোগের লণ কমানোর জন্য কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। লেভোডোপা ও কার্বিডোপা সেবনে লণগুলো অনেকাংশে কমে যায়। এটি এখন পর্যন্ত এই রোগ চিকিৎসার সেরা ওষুধ। এছাড়া ব্রমোক্রিপ্টিন, সেলেজিলিন, এমানটিডিন, অ্যান্টিকলিনার্জিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সার্জারি করা যায়।
    এ রোগ পুরোপুরি ভালো হয় না। তাই এ রোগে আক্রান্তদের ওষুধ সেবনের পাশাপাশি লাইফস্টাইলে পরিবর্তন করতে হয়। আক্রান্তদের পুষ্টিকর সুষম খাবার খেতে হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করতে হয়। আক্রান্তরা হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে আহত হন। আবার পড়ে গেলে বয়স বেশি বলে ভেঙে যায় হাড়। এটি প্রতিরোধ করতে হলে সচেতন হতে হবে। হাঁটার সময় তাড়াহুড়া করবেন না। এমন পোশাক পরুন যেটিতে বোতাম কম বা চেইন আছে।
    পারকিনসন্স কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, তা নিয়ে অনেক গবেষণা হলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়নি। গবেষকদের মতে, কফি জাতীয় তরল পানে এর ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমে আসে।
প্রকাশ :জুলাই ২৮, ২০১৮ ১২:৩২ অপরাহ্ণ