বিনোদন প্রতিবেদক:
শাকিব খানের ‘নোলক’ ছবিতে মাত্র দুটি গান আর কিছু দৃশ্যের শুটিং বাকি রয়েছে। পরিচালকের মতে, মাত্র চার-পাঁচ দিন শুটিং হলেই পুরো ছবির কাজ শেষ হবে। এর মধ্যে জানা গেল, পরিচালকের কাছ থেকে নাকি ছবিটি ছিনতাই হয়ে গেছে! এই মুহূর্তে ভারতের কলকাতায় অন্য একজন পরিচালককে নিয়ে ছবিটির শুটিং করছেন প্রযোজক। আর তা ছবির নায়ক শাকিব খান ও পরিচালক রাশেদ রাহা—কাউকেই জানানো হয়নি।
প্রথম আলোর কাছে ক্ষোভ জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাশেদ রাহা বললেন, ‘একজন পরিচালকের কাছে তাঁর সৃষ্টি হচ্ছে সন্তানের মতো। আমি আমার সেই সন্তানকে লালন-পালন করে বড় করছি, ঠিক তখনই প্রযোজক তাঁর ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিয়ে আরেকজনকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নিতে চান! আমার ছবিকে ছিনতাই করা হচ্ছে।’
প্রযোজকের এ মনোভাব কবে জানতে পেরেছেন? রাশেদ রাহা বলেন, ‘মাস খানেক আগে ছবির প্রযোজক সাকিব ইরতেজা চৌধুরী আমাকে ফোন করে বলেন, এখন থেকে পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী “নোলক” ছবির বাকি অংশের শুটিং করবেন। আমি যেন তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করে নিই। তা শোনার পর আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা! যে ছবির শুটিং বাকি আর মাত্র কয়েক দিনের, তা নাকি এখন অন্য কেউ শুটিং করবেন! এ দৃশ্য আমাকে দেখতে হবে! এরপরও প্রযোজকের কথামতো আমি ইফতেখার চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তিনি আমার ফোন কিংবা এসএমএসের কোনো জবাব দেননি। এর মধ্যে একদিন দেখি, তিনি আমাকে ফেসবুকে তাঁর বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন!’
এদিকে ‘নোলক’ ছবির পরবর্তী অংশের শুটিং করতে এখন ভারতের কলকাতায় আছেন মৌসুমী, ওমর সানি, ববি, তারিক আনাম খান খান, রূপসজ্জাশিল্পী মানিকসহ আরও অনেকে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, পরিচালক ইফতেখার চৌধুরীও ‘নোলক’ ছবির শুটিং স্পটে আছেন। এদিকে প্রযোজক সাকিব ইরতেজা চৌধুরী আজ রোববার দুপুরে কলকাতা থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে পরিচালক হিসেবে রাশেদ রাহার কোনো চুক্তি হয়নি!’
অথচ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নথিতে দেখা যায়, গত বছর ২৩ নভেম্বর ‘নোলক’ ছবির নামটি নিবন্ধন করা হয়। আর সেখানে পরিচালক হিসেবে রয়েছে রাশেদ রাহার নাম। এ ব্যাপারে সাকিব ইরতেজা চৌধুরী বলেন, ‘এই ছবির পরিচালক এখন আমি। শুরু থেকে শুটিংয়ের বিষয়টি আমিই তদারকি করেছি।’
তাহলে ছবির মহরতের সময় পরিচালক হিসেবে কেন রাশেদ রাহাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল? তখন ‘নোলক’ ছবির শুটিংয়ের সেটে তাঁকেই পরিচালনা করতে দেখা গেছে। সাকিব ইরতেজা চৌধুরী বলেন, ‘আমি ঢাকায় এসে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলব। ২৫ জুলাই পর্যন্ত আমাদের শুটিং চলবে।’
রাশেদ রাহার ব্যাপারে অভিযোগ করে সাকিব ইরতেজা চৌধুরী বলেন, ‘পরিচালক হিসেবেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুটিংয়ের সময় রাশেদ রাহা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। সবকিছু আমাকেই করতে হয়েছে। এখন আমি ছবির প্রযোজকের পাশাপাশি পরিচালকও।’
ইফতেখার চৌধুরীর ব্যাপারে সাকিব ইরতেজা চৌধুরী বলেন, ‘আমি রাশেদ রাহাকে বলেছি, ইফতেখার চৌধুরী যেহেতু ভিএফএক্সের কাজ ভালো বোঝেন, তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে। কারণ, এই ছবিতে গ্রাফিকস আর অ্যানিমেশনের কাজ আছে। তিনি কিন্তু এই ছবির পরিচালক নন।’
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচালক রাশেদ রাহার কোনো চুক্তি হয়নি, সাকিব ইরতেজা চৌধুরীর এই দাবির ব্যাপারে রাশেদ রাহা বলেন, ‘পরিচালক হিসেবে আমার সঙ্গে তাঁরা চুক্তি করা হয়নি। কিন্তু মহরতের সময় পরিচালক হিসেবে কেন আমাকে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে উপস্থিত অতিথি আর সাংবাদিকদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিলেন? ভারতের হায়দরাবাদে কেন আমাকে দিয়ে ২৮ দিন শুটিং করালেন! ছবির অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, সেখানে কিন্তু পরিষ্কার লেখা আছে, “নোলক। একটি রাশেদ রাহা চলচ্চিত্র।” এখন অন্য কথা তিনি কেন বলছেন?’
কলকাতায় এখন ‘নোলক’ ছবির শুটিং হচ্ছে, তা জানেন না ছবির নায়ক শাকিব খান। পরিচালককে বাদ দিয়ে সেখানে শুটিং হচ্ছে জেনে তিনি প্রথম আলোর কাছে বিস্ময় প্রকাশ করছেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘কোনো প্রযোজক এটা করতে পারবেন না। অনুমতি ছাড়া অন্য পরিচালককে দিয়ে কাজ করার চেষ্টা গুরুতর অপরাধ। এখন ভুক্তভোগী পরিচালক যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
গত বছর ১ ডিসেম্বর ভারতের হায়দরাবাদে ‘নোলক’ ছবির শুটিং শুরু হয়। এর পাঁচ দিন পর ছবির নায়ক শাকিব খানের ‘ফার্স্ট লুক’ প্রকাশ করেন পরিচালক রাশেদ রাহা। শাকিব খান, ববি, মৌসুমী, ওমর সানি, তারিক আনাম খান ছাড়া এই ছবির অভিনয়শিল্পীরা হলেন নিমা রহমান, রেবেকা, ভারতের রজতাভ দত্ত, সুপ্রিয় দত্ত, অমিতাভ ভট্টাচার্য প্রমুখ।
‘নোলক’ পরিচালক রাশেদ রাহার প্রথম চলচ্চিত্র। এর আগে এই পরিচালক কয়েকটি নাটক নির্মাণ করেছেন। এই সিনেমার প্রযোজক সাকিব ইরতেজা চৌধুরীও একজন তরুণ। দুই তরুণের এই মেলবন্ধনকে স্বাগত জানিয়ে মহরত অনুষ্ঠানে শাকিব খান বলেছিলেন, ‘আধুনিক ও মানসম্মত বাংলা সিনেমা “নোলক”। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে ভালো বাংলা সিনেমা নির্মাণ করা যায়, এটি হবে তার উদাহরণ। আর তা তরুণেরাই করে দেখাবে।