২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:০১

অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহারের শেষ পরিণতি অন্ধত্ব

স্বাস্থ্য ডেস্ক:
পরিসংখ্যান বলছে ২৫-৩৫ বছর বয়সিদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই রাতে শুতে যাওয়ার সময় বালিশের পাশে মোবাইল ফোন রাখেন। আর ঘুম যতক্ষণ না আসছে, ততক্ষণ হোয়াটসঅ্যাপ অথবা ফেসবুকে চলতে থাকে দাপাদাপি। আর এই করতে করতে কখন যে ঘড়ির কাঁটা পরের দিনে ঢুকে যায়, সেদিকে খেয়ালই থাকে না বেশিরভাগের।

আপনিও কি এমনটা করে থাকেন নাকি? তাহলে আজ থেকেই বন্ধ করুন এই অভ্যাস। না হলে শরীরের যে কী কী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, সে বিষয়ে কোনও ধরণা নেই আপনাদের! প্রসঙ্গত, এই প্রবন্ধে অন্ধকারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে কী কী ক্ষতি হতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। আর একবার যদি এই লেখাটি পড়ে ফেলেন, তাহলে যে আর কোনও দিন শুতে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না, সে কথা হলফ করে বলতে পারি।

আসলে অন্ধকারে মোবাইলের নীল আলো চোখের মারাত্মক ক্ষতি তো করেই। সেই সঙ্গে শরীরে মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। ফলে ঘুম আসতে চায় না। আর দিনের পর দিন রাতে ঠিক মতো ঘুম না হলে শরীরে একে একে বাসা বাঁধতে শুরু করে একাধিক জটিল রোগ। এছাড়াও দেখা দেয় আরও নানা রকমের সমস্যা। যেমন ধরুন…

মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়:

ঠিক মতো ঘুম না হলে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা কমতে শুরু করে। ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। শুধু তাই নয় ব্রেণে রক্ত প্রবাহে নানা বাঁধা আসতে শুরু করে। ফলে মস্তিষ্ক সম্পর্কিত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।

ঘুম কমে যায়:

যেমনটা আগেও বলেছি মোবাইল ফোনের আলো নানা ভাবে শরীরে মেলাটনিন হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। ফলে সহজে ঘুম আসতে চায়। কারণ আমাদের ঘুম কতটা ভাল হবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণের উপর।

দৃষ্টিশক্তি কমে যায়:

অন্ধকারে অনেক সময় ধরে মোবাইল ঘাটলে তার নীল আলো সরাসরি চোখের উপর পরতে থাকে। যে কারণে চোখে যন্ত্রণা হতে পারে। আর দীর্ঘদিন ধরে যদি এমনটা হতে থাকে, তাহলে এক সময়ে গিয়ে দৃষ্টিশক্তি মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে কিন্তু!

রেটিনা খারাপ হতে শুরু করে:

অন্ধকারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে তার নীল আলো রেটিনার কার্মক্ষমতা কমাতে শুরু করে। দীর্ঘ দিন ধরে যদি এমনটা চলতে থাকে তাহলে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাই যদি কম বয়েস অন্ধ হতে না চান, তাহলে আজ থেকেই ফোনটা নিজের থেকে দূরে রেখে শুতে যাওয়ার অভ্যাস করুন। নাহলে কিন্তু বিপদ!

ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়:

মোবাইলের নীল আলোর কারণে শুধু মেলাটোনিন হরমোন নয়, সেই সঙ্গে আরও সব হরমোনের ক্ষরণে বাঁধা আসতে শুরু করে, ফলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে, যা ক্যান্সার রোগে, বিশেষত ব্রেস্ট এবং প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়।

তাহলে আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, সুস্থ ভাবে বাঁচতে চান না মোবাইলকে জীবনের আগে রাখতে চান। প্রসঙ্গত, মোবাইলের নীল আলোর কারণে যাতে চোখের কোনও ক্ষতি না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে এই নিয়মগুলি মেনে চলতে পারেন…

বার বার চোখ খুলুন আর বন্ধ করুন:

একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে বারে বারে চোখ পিটপিট করলে চোখের অন্দরে জলের মাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। আর চোখ আদ্র থাকলে নীল আলোর কারণে চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা যে কমে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই! তাই অনেকক্ষণ মোবাইল ফোন যদি ব্যবহার করতে হয়, তাহলে চোখকে বাঁচাতে বারে বারে চোখ পিটপিট করতে ভুলবেন না যেন!

মোবাইলের ব্রাইটনেস:

ব্যাটারি লাইফকে বাড়াতে ভুলেও মোবাইল স্ক্রিনের ব্রাইটনেস একেবারে কমিয়ে ফলবেন না যেন! কারণ অতিরিক্ত ব্রাইটনেস যেমন চোখের পক্ষে ভাল নয়, তেমনি কম আলোও মারাত্মকভাবে রেটিনার ক্ষতি করে থাকে। তাহলে এখন প্রশ্ন হল ব্রাইটনেস কতটা থাকা চোখের পক্ষে ভাল? এক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা হল যেখানে রয়েছেন, সেখানকার আলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মোবাইল স্ক্রিনের ব্রাইটনেস ঠিক করে নেবেন, তাহলেই দেখবেন কেল্লা ফতে!

মোবাইল স্ক্রিন পরিষ্কার রাখবেন:

মোবাইল স্ক্রিনের উপর জমতে থাকা ধুলো পরিষ্কার করে না নিলে স্ক্রিন দেখার সময় চোখের উপর মারাত্মক চাপ পরে। ফলে রেটিনার ক্ষতি হয়ে যেতে সময় লাগে না। এই কারণে তো কিছু সময় অন্তর অন্তর একটা ড্রাই কাপড় দিয়ে স্ক্রিনটা পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত।

প্রকাশ :জুলাই ২২, ২০১৮ ৪:৩৩ অপরাহ্ণ