২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:১৩
বাংলাদেশি সিনেমা হল

ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দেশপ্রেম: এক হলে দেশি ছবি, শতাধিক হলে বিদেশি!

বিনোদন ডেস্ক:
রোজার ঈদ শেষ হল এক মাসেরও বেশি সময় আগে। ঈদের ছবির ডামাডোলের পর এর মধ্যে বাংলাদেশি প্রযোজনায় মুকুল নেত্রবাদী পরিচালিত ‘প্রেমিক ছেলে’ নামে একটি ছবি মুক্তি পেলেও সেটি নিয়ে কোনো প্রচারণা না থাকায় কেউ জানতেও পারেনি।

যদিও নিম্নমানের অখ্যাত পরিচালক কিংবা শিল্পী নিয়ে তৈরি এসব ছবি নিয়ে প্রচারণা করাটাই বরং ছবির জন্য ক্ষতিকর। পরিচালক কিংবা প্রযোজক সেটা বুঝতে পেরেই হয়তো ছবিটি মুক্তির আগে কিংবা পরে কোনো প্রচারণায় যাননি।

তাই এটি রয়ে গেল আলোচনা-সমালোচনার বাইরে। ঈদের পর ধারাবাহিক ছবি মুক্তির প্রক্রিয়া যথাযথভাবে শুরু হয়েছে ২০ জুলাই থেকে। এ দিন দেশের শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে দুটি ছবি। এর মধ্যে একটি ভারতের প্রযোজনায়, যা সাফটা চুক্তির আওতায় মুক্তি পেয়েছে, নাম ‘সুলতান : দ্য সেভিয়র’।

এ ছবিতে অভিনয় করেছেন কলকাতার জিৎ ও বাংলাদেশের মিম। প্রযোজনা করেছে জিতের প্রতিষ্ঠান জিৎ ফিল্ম ওয়ার্কস। অন্যটি বাংলাদেশি প্রযোজনায়, নবাগত অভিনেতা রাশান নূর ও ছোট পর্দার অভিনেত্রী মুমতাহিনা টয়া অভিনীত ‘বেঙ্গলী বিউটি’।

এ ছবিটি পরিচালনা করেছেন অভিনেতা রাশান নূর। প্রযোজনাও করেছেন তিনি। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও শতভাগ বাংলাদেশি প্রযোজনায় নির্মিত ‘বেঙ্গলী বিউটি’ মাত্র একটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে!

অন্যদিকে ভারতীয় ছবি ‘সুলতান’ মুক্তি দেয়া হয়েছে শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে! একমাত্র রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার সিনেমাসে ‘বেঙ্গলী বিউটি’ ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে দেশের আর কোনো প্রেক্ষাগৃহই ছবিটি দেখাতে উৎসাহী নয় কিংবা তাদের ছবিটি প্রদর্শনে বাধা দেয়া হয়েছে।

দেশি সিনেমার প্রতি এটাই হচ্ছে বাংলাদেশি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কিংবা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রেম-প্রতারণা। একটিমাত্র প্রেক্ষাগৃহে একটি বাণিজ্যিক ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে, আবার অন্যদিকে ভিনদেশি ছবি শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়া হল- এ নিয়ে চলচ্চিত্র পরিবার কিংবা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কারও কোনো প্রতিবাদ কিংবা প্রকাশ্য মন্তব্য নেই।

যেন মুখে কুলুপ এঁটেছেন সবাই। কেন এটা? বেঙ্গলী বিউটি ছবির পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী নতুন বলে? নাকি এরা চলচ্চিত্র পাড়ায় নিজেদের জাহির করেননি বলে! অনেকে হয়তো বলবেন এ ছবির প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা রাশান নূর ছবি নির্মাণ কিংবা মুক্তির সময় ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।

এমনটি ভেবে থাকলে ভুল। কারণ তিনি ছবি নির্মাণের শুরুতেই যোগাযোগ করে কয়েকজনের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন। তারা তাকে আর্থিকভাবে ঠকিয়েছে। নির্মাণের পর সেন্সর পরবর্তী মুক্তির জন্য দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি প্রযোজনা সংস্থাকে দায়িত্বও দিয়েছিলেন।

তারাও আজ না হয় কাল বলে গড়িমসি করেছে। এমনিতেই ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন কোনো প্রযোজক নেই। নেই ভালো মানের কোনো ছবি। সেখানে প্রতিভাবান নতুন কেউ এলে তাকে স্বাগত না জানিয়ে, কিংবা সহযোগিতা না করে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করাই যেন হচ্ছে চলচ্চিত্রের বর্তমান কাণ্ডারীদের কাছে মুখ্য।

অন্যদিকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে সাফটা চুক্তির বিরোধিতা করলেও এর আওতায় বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া ‘সুলতান’ কিন্তু একশ’রও বেশি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে। এটি একটি নকল ছবি।

দক্ষিণ ভারতের নায়ক অজিত কুমার অভিনীত ‘ভেডালাম’ ছবির হুবহু নকল সুলতান। ভেডালাম বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে অতি পরিচিত একটি ছবি। বিশেষ করে এ ছবির নায়ক অজিত কুমারের সঙ্গে বাংলাদেশের একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক নাঈমের সঙ্গে যথেষ্ট মিল থাকার কারণে সোশ্যাল মাধ্যমে এ ছবিটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনাও হয়েছে।

সেই দর্শকদের অতি পরিচিত এবং দেখা একটি ছবির ‘বাংলা ভার্সন’ নিয়ে যখন দেশের প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের মধ্যে অতি উৎসাহ দেখা যায় তখন সত্যিই ‘বাংলাদেশ’কে ‘অসহায়’ মনে হয়। নাকি প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের ওপর সুলতান ছবিটি প্রদর্শনের ভার বইয়ে দেয়া হয়েছে!

এ ব্যাপারেও প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। যদিও শেখানো বুলির মতো বরাবরই বলছেন, ‘দেশি ছবির মান ভালো না। দর্শক হলে আসে না। হল খরচই ওঠে না। তাই কলকাতার ছবি চালিয়ে তাদের খরচ পুষিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।’

কিছু কিছু সময় ঠিক থাকলেও এ শেখানো বুলিটা কিন্তু সব সময় সত্যি নয়। এই যেমন, চলতি সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি ছবি ‘বেঙ্গলী বিউটি’ যথেষ্ট মানসম্পন্ন একটি পরিচ্ছন্ন ছবি। তার ওপর বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের গল্প নিয়ে ছবিটি নির্মিত হয়েছে।

সেখানে ‘দেশপ্রেম’-এর বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েও এ ছবিটি অন্তত অর্ধশত প্রেক্ষাগৃহেও মুক্তি পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আদপে তা হয়নি। আসলে দেশপ্রেম বলতে কিছুই নেই ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। সময় সময় আন্দোলন, প্রতিবাদ- এ সবই ব্যক্তিস্বার্থে কিংবা নিজেদের প্রয়োজনে।

না হলে এক হলে বাংলাদেশি ছবি, অন্যদিকে একই সময়ে একশ’রও বেশি হলে ভারতীয় ছবি- এর বিরুদ্ধে একবারও প্রতিবাদ না করে একেবারে নিশ্চুপ থাকাটা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কিংবা চলচ্চিত্র পরিবারের জন্য কতটা যৌক্তিক, কিংবা সেটা আদৌ তাদের মধ্যে দেশপ্রেম তো দূরের কথা, যেখানে নিজেদের রুটি-রোজগার, সেই সিনেমার প্রতি প্রেম আছে কিনা সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।

প্রকাশ :জুলাই ২২, ২০১৮ ২:৪১ অপরাহ্ণ