২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:১৪

রাশিয়ায় আটকে পড়াদের বেশির ভাগই সিলেটের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির দালাল চক্রের মাধ্যমে রাশিয়ায় এসেছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি তরুণ। কাগজপত্রে তাদের সফরের উদ্দেশ্য বিশ্বকাপ হলেও আসল উদ্দেশ্য রাশিয়া হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমানো। বিশ্বকাপ উপলক্ষে রুশ সরকারের উদারনীতির সুযোগে পাঁচ থেকে আট লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের ইউক্রেন, বেলারুশ
, ফিনল্যান্ড পাঠানোর কথা বলে রাশিয়ায় এনেছেন দালাল দত্ত বাবু, মোশাররফ হোসেন, আবুল বাশার, শহিদুল ও বাদল। রাশিয়ার ইমিগ্রেশনের তথ্যমতে পাঁচ হাজারের অধিক বাংলাদেশি টিকিট কেটে ফ্যান আইডি খুলে রাশিয়া এসেছেন। যদিও ভুক্তভোগীদের মতে সংখ্যাটা ১০ হাজারের অধিক। এদের বেশির ভাগই সিলেটের।

স্বাভাবিকভাবে আটক হওয়াদের মধ্যে সিলেটিদের সংখ্যাটাই বেশি। মোশাররফ ও আবুল বাশারের সহায়তায় সিলেট উপশহরে অবস্থিত মুসাফির ট্রাভেল এজেন্সির মালিক জাহিদের মাধ্যমে সিলেটিরা রাশিয়া এসেছেন।

ফিফার বদৌলতে ২৯২টি টিকিট পেয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, এই টিকিটে খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছেন সাবেক ফুটবলার, ক্রীড়া সংগঠক, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কাছে ধরনা দিয়ে দালাল চক্র টিকিট না পেয়ে অবলম্বন করে ভিন্ন পথ। যারা টিকিট কেটে ফ্যান আইডি খুলে খেলা দেখে ইউরোপে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে রাশিয়া গেছেন তাদের বেশিরভাগের টিকিট সংগ্রহ করা হয়েছে ইংল্যান্ড থেকে। হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জের সুমন এই প্রতিবেদককে জানান, তার ভাই লন্ডন থেকে তার জন্য টিকিট কেটে পাঠিয়েছেন। সুমনের মতে প্রায় অনেকেই আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্বকাপের টিকিট সংগ্রহ করে রাশিয়া এসেছেন। যারা এভাবে ম্যাচের টিকিট পাননি তাদের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আবুল বাশার ও মোশাররফ। স্বাগতিক রাশিয়ার এক ব্যক্তি সর্বাধিক চারটি ম্যাচ টিকিট পেয়েছে।

জানা গেছে এই সুযোগ নিয়ে রাশিয়ার পার্সপোটধারী মোশারফ বিভিন্ন রাশিয়ানকে ম্যানেজ করে টিকিটগুলো সংগ্রহ করেছেন। বাশারের বোনকে বিয়ে করেছেন মোশাররফ। মোশাররফ লাগেজ ব্যবসার পাশাপাশি রাশিয়াতে একটি ট্রাভেল এজেন্সি খুলে বসেছেন। যার কাজ হচ্ছে অবৈধভাবে বাংলাদেশি এনে ইউরোপে পাচার করা। এমন কথাই সবার মুখে মুখে। তাকে সহায়তা করছেন অবৈধভাবে রাশিয়াতে থাকা আবুল বাশার। সিলেটে বসে বাকি কাজ সেরেছেন জাহিদ। শুরুতে এদের মস্কোতে এনে জড়ো করেন বাশার ও মোশাররফ। সেখান থেকে সময় সুযোগ মতো অনেককে নিয়ে যাওয়া হয় কালিনিনগ্রাদ, সেন্ট পিটার্সবার্গ, ইয়েকাতারিনবার্গ, সারাঙ্ক, সামারা ও রোস্তভের বিভিন্ন বর্ডারে। আবার অনেকে দিনের পর দিন পরে আছেন মস্কোর ভেদেন খা’র জাহাঙ্গীরের মেসের মতো অনেক বাঙালির বাসাবাড়িতে।

যেখানে একটি রুমে গাদাগাদি করে থাকছেন ২০/২৫ জন বাঙালি। ভেদেন খা’র জাহাঙ্গীরের মেসে আলাপ হয় সিলেটের সুমন, খালেক, ফারুক, ফকরুলদের সঙ্গে। আলাপকালে ভুক্তভোগী ফারুক জানায়, মোশাররফ ও আবুল বাশারের পাচারের এই কাহিনী। তার মতো অনেকেই রাশিয়ার বিভিন্ন বর্ডারে আছে। এরমধ্যে একদিনে ইউক্রেন বর্ডারে ৪শ’ সিলেটি আটকা পড়েছেন বলে জানান তিনি। সিলেট ওসমানী নগরের খালেক জানান, আমরা আবুল বাশার কিংবা মোশাররফকে চিনতাম না। জাহিদের মাধ্যমেই ওই দুই জনের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়েছে। জাহিদ আমাদের বিমান টিকিটসহ যাবতীয় কাজ করে দেয়ার বিনিময়ে একেক জনের কাছ থেকে আড়াই/তিন লাখ টাকা করে নিয়েছে। আর আড়াই তিন লাখ টাকা দিতে হয়েছে বাশার, মোশাররফকে। কথা ছিল মস্কোতে আসা মাত্রই আমাদের ফিনল্যান্ড, বেলারুশ হয়ে ইউরোপের যেকোনো দেশে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু সেটা না পেরে এখন তারা গা-ঢাকা দিয়েছে। দেশে জাহিদকে না কি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমরা মহাবিপদে আছি। আমাদের চেয়ে বেশি বিপদে আছেন যারা পুলিশের হাতে আটকা পড়েছেন। ভিডিওতে আমরা তাদের নির্যাতনের দৃশ্য দেখেছি। এখানে আমাদের আতঙ্কে দিন কাটছে।

মৌলভীবাজারের তারেক নামে বিশ বছরের এক যুবক পুলিশের হাতে আটক হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে তার পরিবারের। যদিও বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন মোশাররফ। স্থানীয় বাঙালীদের কাছে তিনি দাবি করছেন অন্য কেউ এসব করে তার নামে চালিয়ে দিচ্ছে। এসব দালালের কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রাশিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশিরা।

প্রকাশ :জুলাই ২২, ২০১৮ ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ