নিজস্ব প্রতিবেদক:
গুপ্তধনের খোঁজে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ১৬ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর বাড়িতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়েছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামানের নেতৃত্বে ২০ শ্রমিক বাড়িতে খোঁড়া শুরু করেন। খবর পেয়ে বাড়িটির আশপাশে ভিড় করেছেন শতশত উৎসুক মানুষ।
এর আগে গত বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অস্ত্রসহ দাঁড়িয়ে বাড়িটি পাহারা দিচ্ছিলেন পুলিশের চার সদস্য। গত এক সপ্তাহে মিরপুরে গুঞ্জন ছড়ায়, ওই একতলা বাড়ির মাটির নিচে লুকানো রয়েছে ‘গুপ্তধন’। স্বর্ণালঙ্কার ও দামি নানান জিনিসপত্র সেখানে রয়েছে। গুঞ্জনের পালে হাওয়া লাগে যখন আবার পুলিশ দিনরাত বাড়িটি পাহারা দেওয়া শুরু করে। শেষ পর্যন্ত গুপ্তধনের রহস্য উন্মোচন করতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও আদালতের শরণাপন্ন হয় মিরপুর থানা পুলিশ।
তবে স্থানীয়দের কেউ কেউ মনে করেন, কোটি টাকা মূল্যের বাড়িতে গুপ্তধন থাকার কথা বলে দখল, হাতবদলের চেষ্টা করছে একটি পক্ষ।
জানা যায়, ১৪ জুলাই বাড়িটির বর্তমান মালিক দাবিদার মনিরুল আলম মিরপুর থানায় একটি জিডি করেন। সেখানে তিনি বলেন, তার বাসার মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে বলে এলাকার লোকজনের মধ্যে জনশ্রুতি রয়েছে। এ কারণে বাড়িটির সামনে প্রতিদিন লোকজন ভিড় করছে। যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বাড়িটি দুই কাঠা জমির ওপর নির্মিত। আপাতত কোনো ভাড়াটিয়া নেই। একজন নিরাপত্তারক্ষী বাড়িটি দেখভাল করেন। যেহেতু জনশ্রুতি আছে বাসার মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে, তাই বাড়ি খননে তার কোনো আপত্তি নেই। খননের খরচও তিনি বহন করবেন। যদি গুপ্তধন পাওয়া যায়, তাহলে তা বেওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া বিধি মোতাবেক তা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। জিডির কথা উল্লেখ করে পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়।
সেখানে বলা হয়েছে, বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই এ ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই ও এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বাড়িটি খনন করা প্রয়োজন।
আরও জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ সদরের বাসিন্দা তৈয়ব নামে এক ব্যক্তি মিরপুর থানায় আরও একটি জিডি করেন। জিডিতে তিনিও ওই বাড়িতে গুপ্তধন থাকার কথা জানান।
তৈয়ব বলেন, মিরপুরের ওই বাড়ির মূল মালিক দিলশাদ খান। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান চলে যান। দিলশানের দূরসম্পর্কের আত্মীয় সৈয়দ আলম তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আলমও পাকিস্তানে থাকেন। মাঝে মধ্যে দেশে আসেন। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। আলম তাকে তথ্য দেন, মিরপুরের ওই বাড়িটির নিচে দুই মণের বেশি স্বর্ণালঙ্কার ও দামি জিনিসপত্র রয়েছে। পাকিস্তানে থাকাকালে আলমকে ওই তথ্য দেন দিলশাদ। এরপর আলমকে নিয়ে তৈয়ব মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা এ সম্পদ দখলে নিতে টেকনাফ থেকে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আসার পর তৈয়বকে আড়ালে রেখে গোপনে বাড়িটির বর্তমান মালিকের সঙ্গে আঁতাত করেন আলম। তারা মাটির নিচের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করেন। বিষয়টি টের টেয়ে তিনি তার পূর্ব পরিচিত রাবেয়া চৌধুরী নামে এক নারীকে নিয়ে থানায় যান। তারা বিষয়টি জানিয়ে জিডি করার সিদ্ধান্ত নেন।
কীভাবে বিশ্বাস করলেন ওই বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে- এমন প্রশ্নে তৈয়ব বলেন, আলম এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত দেখিয়েছে, তাতে আমার শতভাগ বিশ্বাস- ওই বাড়ির নিচে মহামূল্যবান ধন রয়েছে। যাতে কোনো ব্যক্তি এটা ভোগদখল করতে না পারে তাই পুলিশকে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, যে পক্ষ থানায় গিয়ে দাবি করেছে ওই বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে, তারা কক্সবাজার ও ঢাকায় জমি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। কোনো পক্ষের হয়ে তারা বাড়িটি কৌশলে দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা করছে কি-না তা খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়দের কয়েকজন।
বাড়িটির মূল তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, আড়াই বছর ধরে বাড়ির মূল মালিকের সঙ্গে তার দেখা নেই। শহীদুল্লাহ নামে মালিকের এক ঘনিষ্ঠ লোকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেন। বাড়ির ভালোমন্দ সব কিছু তাকে জানান। শহীদুল্লাহ পুলিশের সদস্য বলেও জানান তিনি। তবে শহীদুল্লাহর নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। শফিকুল ইসলাম আরও জানান, টিনের চালা নষ্ট হয়ে পড়ায় বছরখানেক ধরে কোনো ভাড়াটিয়া নেই। বাড়িটি মালিক ঠিকঠাকও করেননি।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি মাসুদ আহম্মেদ বলেন, দুই পক্ষ বাড়িতে গুপ্তধন থাকার কথা জানিয়ে জিডি করায় পুলিশ আদালত ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানায়।
স্থানীয় কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, ওই বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। পরে কেউ তা নামজারি করে মালিকানা পেয়েছে কি-না তা জানা নেই। দুই পক্ষই বাড়ির ব্যাপারে আমার কাছে এসেছিল। এরপর তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেন। কক্সবাজার থেকে যে পক্ষটি বাড়িতে গুপ্তধন থাকার কথা বলে যোগাযোগ করেছিল, তাদের উদ্দেশ্য ভালো মনে হয়নি স্থানীয় কাউন্সিলরের। গুপ্তধন থাকার বিষয়টি হাস্যকর বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রাবেয়া চৌধুরী বলেন, বাড়িটির মালিক বিমানের সাবেক কর্মকর্তা দিলশাদ খান। তার ছেলেমেয়েরা কয়েকবার বাবার বাড়ি উদ্ধার করতে গেলেও পারেননি। মনিরুল জোরপূর্বক বাড়িটি দখল করে রেখেছে। এবার দিলশাদের লোকজন পুলিশকে ঘটনাটি জানালে তারা রহস্যজনক আচরণ শুরু করেছে। বাড়ি নিয়ে যা ঘটছে তার সবকিছুই নাটক। দিলশাদের লোকজন বাড়ি দখলে না নিতে পারলে মনিরুলকে থাকতে দেওয়া হবে না। বরং সরকার সেটা দখলে নিক।