চট্টগ্রাম ব্যুরো:
চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়ায় এক রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনরা।
চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে প্রশাসনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতি এ ধর্মঘট সাময়িক স্থগিত করে।
বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘প্রশাসনের আশ্বাস ও জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ধর্মঘট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।’
চিকিৎসক ও হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো যেসব দাবি জানিয়েছে তা বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া রোগীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তারা আপাতত ধর্মঘট স্থগিত করেছেন বলে জানান তিনি।
এর আগে রোববার দুপুরে বিতর্কিত ম্যাক্স হাসপাতালে র্যাবের অভিযানের পর জরুরি সভা ডেকে ওই হাসপাতালটির মালিক বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী খান এ অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দেন।
নগরীর জিইসি মোড়ে অবস্থিত বিএমএ কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। তাদের এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ।
রোববার দুপুর থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, নতুন কোনো রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। আগে ভর্তি হওয়া রোগীদের অনেকেই উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করছেন।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভিড় করছেন। সেখানেও উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা গেছে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে।
অন্যদিকে নগরীর বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালকে নানা অনিয়মের অভিযোগে ৪ লাখ জরিমানা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। রোববার বিকালে নগরীর গোলপাহাড় এলাকার এ হাসপাতালকে এ জরিমানা করা হয়। র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম এ আদেশ দেন।
র্যাব জানায়, অনুমোদনহীন ওষুধ ব্যবহার, একটি ফার্মেসির লাইসেন্স নিয়ে দুটি ফার্মেসি পরিচালনাসহ নানা অনিয়মের কারণে এ জরিমানা করা হয়।
র্যাবের সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান জানান, নানা অনিয়নের অভিযোগে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এ হাসপাতালকে। এ অভিযান আরও ৩-৪ দিন চলবে। স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা আনতে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ম্যাক্স হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাতে আসা হরি সাধন সাহা জানান, ‘আমি রাঙ্গুনিয়া থেকে ডাক্তারদের পরামর্শে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে এসেছি। এক হাজার ৭০০ টাকাও জমা দিয়েছি। তারা পরীক্ষা করাচ্ছে না। শুনেছি তাদের পরীক্ষায়ও ভেজাল আছে। এ জন্য পুনরায় টাকা ফেরত চাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, ‘অতি ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে ডাক্তারদের ধর্মঘট ডাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। ডাক্তারি পেশাটা হচ্ছে সেবামূলক। সমাজের অগ্রগণ্য পেশার লোক তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে ত্রুটি থাকলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাতে হবে। কেননা ত্রুটি নিয়ে হাসপাতাল চললে সেখানে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হবে। সেখানে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া কোনোভাবে কাম্য নয়।’