ক্রীড়া ডেস্ক:
বেলজিয়ামের বিপক্ষে ১-২ গোলে হেরে কোয়ার্টারে ফাইনালেই থেমে গেল ব্রাজিল। আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে পা রাখল বেলজিয়াম।
কাজান যেন বড় দলগুলোর জন্য মৃত্যুকূপ! এখানেই গ্রুপ পর্বে ‘অপমৃত্যু’ হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির। শেষ ষোলোতে আটকে গেছে আর্জেন্টিনার স্বপ্নের রথের চাকা। সেই কাজানে আরেক শিরোপা প্রত্যাশী পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের কী হয়, তা–ই ছিল দেখার অপেক্ষা। এতক্ষনে সবাই জেনে গেছেন কাজান নামক মৃত্যুকূপে বেলজিয়ামের কাছে ধাক্কা খেয়ে ডুবেছে ব্রাজিলও। সেমিফাইানালে ওঠার লড়াইয়ে সেলেসাওদের হার ১-২ গোলে।
সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ব্রাজিল ও বেলজিয়াম ম্যাচ থেকে দর্শকেরা যা আশা করেছিলেন, তার সবই হয়তো পাওয়া গেছে। কি না ছিল কাজানে? দুর্দান্ত শটে গোল, পোস্টে লেগে বল ফিরে আসা, দৃষ্টিনন্দন মুভ, নির্ভুল কাউন্টার অ্যাটাক। সব মিলিয়ে ম্যাচের পরতে পরতে উত্তেজনা। তবে দর্শকের দৃষ্টি কেড়ে নিতে পারে যে দৃশ্যটি, তা হলো বেলজিয়াম গোলরক্ষক থিবি কোর্তোয়ার দুর্দান্ত সব সেভ। যা ব্রাজিল সমর্থকদের বুকে শেল হয়ে বিদ্ধ হওয়ার কথা।
ব্রাজিলিয়ানদের স্বপ্ন কেড়ে নেওয়ার জন্য কোর্তোয়া তো আজ একাই ছিলেন যথেষ্ট। কতবার কুতিনহো, নেইমারদের সামনে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছেন চেলসির এই গোলরক্ষক, জানেন? নয়বার। সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্রাজিলের দুর্ভাগ্য ও গোল মিস। আর একটা কারণে তো শুরু থেকেই পিছিয়ে থেকে ম্যাচ শুরু করে ব্রাজিল। তা হলো হোল্ডিং মিডফিল্ডার কাসেমিরোর না থাকা। তাঁর অভাবটা কত ভুগিয়েছে ব্রাজিলকে, তা তো ব্রাজিলের রক্ষণভাগে কাঁপুনি দেখেই বোঝা গিয়েছে। যেই রক্ষণভাগ আগের চার ম্যাচে গোল হজম করেছে একটি। আজ এক ম্যাচেই দুই গোল হজম করল তারা।
অথচ রাশিয়া বিশ্বকাপের সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিল ফুল হয়ে ফুটছিল ধীরে ধীরে। আজও পাওয়া গিয়েছিল সে আভাস। কিন্তু শুরুতেই দুর্ভাগ্য হয়ে দাঁড়ায় সাইড পোস্ট। ৮ মিনিটেই সাইড পোস্ট বাধা হয়ে না দাঁড়ালে এগিয়ে যেতে পারত ব্রাজিল। নেইমারের কর্নার কিকে গোলমুখ থেকে পা লাগিয়েছিলেন থিয়াগো সিলভা। কিন্তু তা সাইড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। তিন মিনিট পরে উইলিয়ানের নেওয়া কর্নার থেকেও সুযোগ পেয়েছিলেন পাওলিনহো। কিন্তু তাঁর দুর্বল ভলি বেলজিয়াম ডিফেন্ডার আরামে বিপদমুক্ত করেছেন।
দিনটা যে ব্রাজিলের নয়, তা বোঝা গেল ১৩ মিনিটে আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে। হ্যাজার্ডের নেওয়া কর্নার ক্লিয়ার করতে গিয়ে বাহুতে লেগে বল জালে জড়িয়ে যায়। এগিয়ে গিয়েও আক্রমণের ধার কমাল না বেলজিয়াম। মূলত কাউন্টার অ্যাটাকেই সিলভা, মিরান্দাদের পরীক্ষা নিয়েছেন হ্যাজার্ড, লোকাকুরা। ৩১ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনার করা বেলজিয়ামের দ্বিতীয় গোলটার কথাই মনে করে দেখুন। লোকাকু বল নিয়ে দ্রুত গতিতে ওপরে ওঠে এসে বাড়ালেন ব্রইনাকে। ম্যানচেস্টার সিটির এই মিডফিল্ডার বুলেটগতির শটে জড়িয়ে দিলেন জালে।
দুই গোল হজমের পর ম্যাচে ফিরে আর চেষ্টা করে ব্রাজিল। ৭৬ মিনিটে বদলি রেনাতো আউগুস্তো ব্যবধানও কমায়। বাকি সময়ে বারবার মনে হচ্ছিল সমতায় ফিরতে যাচ্ছে তিতের শিষ্যরা। ৮৪ মিনিটে সবচেয়ে সহজ গোলটি মিস করেন কুতিনহো। বক্সের মধ্যে থেকে নেইমারের কাট ব্যাকে ফাঁকায় থাকা কুতিনহো বলটি পোস্টেই রাখতে পারলেন না। যোগ করা পাঁচ মিনিটেও এসেছিল সুবর্ণ সুযোগ। ডি-বক্স থেকে নেইমারের বাঁকানো শট দুর্দান্ত সেভে ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে শেষবারের মতো বেলজিয়ামের রক্ষাকর্তা গোলরক্ষক কোর্তোয়া। আর ব্রাজিলিয়ানদের জন্য বাড়ি ফেরার রাস্তাটাও দেখিয়ে দিলেন চেলসির ২৬ বছর বয়সী গোলরক্ষক।
২০০২ সালে শেষবার বিশ্বকাপ জেতার পর প্রতিটা বিশ্বকাপই সেলেসাওদের জন্য হেক্সা স্বপ্ন। ঘরের মাঠে ২০১৪ বিশ্বকাপ থেমেছে সেমিফাইনাল থেকেই। আর এবার তো শেষ চারের চৌকাঠেও পা রাখত পারল না ব্রাজিল। আর ৩২ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে পা রাখল বেলজিয়াম। ফাইনালে তাঁদের সামনে বাধা আগের ম্যাচে উরুগুয়েকে বিদায় করে দেওয়া ফ্রান্স।