স্পোর্টস ডেস্ক:
বিশ্বকাপ ফুটবল দরজায় কড়া নাড়ছে। কম-বেশি সব খেলাপ্রেমীর চোখ রাশিয়ার দিকে। বিশ্বকাপের দলগুলো গা গরমের ম্যাচও শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশে বিশ্বকাপের তোড়জোড় চলছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে অন্যবার যেমন থাকে, এবার মনে হয় হই চই-এর মাত্রাটা তার চেয়ে বেশি। আর সাড়াও পড়েছে বেশ। বিভিন্ন এলাকায় চলছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির পতাকা ওড়ানোর প্রতিযোগিতা। কোন দলের সমর্থকরা কোন এলাকায় কত বড় পতাকা ওড়াবেন, আর কে কার চেয়ে ওপরে পতাকা লাগাবে- তাই নিয়েই মেতে আছে কিশোর ও তরুণরা।
এরই মধ্যে জাতীয় ক্রিকেট দলও ব্যস্ত তাদের সফরসূচি নিয়ে। আজ ভারতের দেরাদুন গেছে আফগানিস্তানের সঙ্গে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নিতে। তা নিয়েও উৎসাহের কমতি নেই। ক্রিকেটের এই একটি মাত্র ফরম্যাটে টি-টোয়েন্টি, যার র্যাংকিংয়ে আফগানরা টাইগারদের ওপরে। কাজেই রশিদ খান, মোহাম্মদ শাহজাদ, মোহাম্মদ নবি আর মুজিব-উর রহমানদের সঙ্গে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাদের লড়াইটা কেমন হয়- তা দেখতেও উৎসাহী ক্রিকেট অনুরাগীর সংখ্যা কম নয়।
এই যখন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অবস্থা, ঠিক এমন সময় হঠাৎ বোমা ফাটালেন পরিকল্পনামন্ত্রী ও দেশের ক্রিকেটের পরিচিত মুখ অন্তঃপ্রাণ ক্রিকেট সংগঠক এবং সাবেক বিসিবি, এসিসি ও আইসিসি প্রেসিডেন্ট আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার ঘোষণা, দেশের দুই শীর্ষ ক্রিকেট তারকা ও জাতীয় দলের তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং সাকিব আল হাসান এবার আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে সাকিবের বিষয়ে তিনি একটু রাখঢাক করে বললেও, মাশরাফির বিষয়টি একদম খোলামেলা করে দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। মুস্তফা কামাল বলে দিয়েছেন, মাশরাফি নড়াইল থেকে নির্বাচন করবে। সে ভালো মানুষ। তাকে ভোট দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রী।
মাশরাফি আর সাকিব জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন- আ হ ম মুস্তফা কামালের এই ঘোষণা ক্রীড়াঙ্গন তো বটেই, গোটা দেশেই আলোড়ন তুলেছে। রাজধানী ঢাকা ছাপিয়ে মাশরাফি আর সাকিবের সংসদ নির্বাচন করার বিষয়টা এখন রীতিমতো টক অফ দ্য কান্ট্রি হয়ে গেছে। মঙ্গলবার বিকেলে ইফতারের আগেই রাজধানী ঢাকায় এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।
বিকেলে মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে ছিল প্রিমিয়ার হকি লিগে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাবের সঙ্গে জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী আবাহনী ম্যাচ। সেই ম্যাচ চলাকালীন এ খবর ছড়িয়ে পড়লে, খেলা চলাকালিনই সাড়া পড়ে যায়। মওলনা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের ওপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এমনিতেই পড়ন্ত বিকেল ও সন্ধ্যায় দলেল সর্বস্তরের নেতাকর্মীর জটলা থাকে। আজ সেখানেও ঘুরে ফিরে মাশরাফি-সাকিবের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী তার প্রসঙ্গ।
একই অবস্থা হোম অব ক্রিকেট শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেও। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই এ খবর চলে আসে দেশের ক্রিকেটের কেন্দ্রবিন্দুতে। সঙ্গে সঙ্গে সাড়া পড়ে যায়। জাতীয় টি-টোয়েন্টি দল আজই সকালে দেরাদুনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে। তাই টেস্ট আর ওয়ানডে স্পেশালিস্টদের কোন সিডিউল প্র্যাকটিস ছিল না। তারপরও মাশরাফিসহ কয়েকজন বিকেলে জিম করতে আসেন। সাংবাদিকরা উন্মুখ অপেক্ষায় ছিলেন মাশরাফি কখন আসবেন, তার জন্য।
কিন্তু মাশরাফি আজ আর জিম বা কোনোরকম ট্রেনিং করতে শেরে বাংলা মুখো হননি। শেরেবাংলা স্টেডিয়াম তথা বিসিবি কার্যালয়ে ভেতরেও মাশরাফি-সাকিবের নির্বাচন করা নিয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের সবার মুখেও ঘুরে ফিরে এই একই প্রসঙ্গ। এদিকে খেলাপ্রেমী, ক্রিকেট অনুরাগী ছাপিয়ে সর্বস্তরের মানুষের কৌতূহল অভিন্ন। মুখে প্রশ্নও একটাই, ‘আচ্ছা! মাশরাফি আর সাকিব কি সত্যি সত্যি এবারই নির্বাচন করবেন?’
এমন কৌতূহলি প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই মাশরাফি ও সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়। সাকিবের মুঠোফোনে বারংবার চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মাশরাফি এমনিতেই প্রাণখোলা মানুষ। শেরেবাংলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রায়ই খোলামেলা আড্ডায় মেতে ওঠেন। কিন্তু আজ দুপুরে আ হ ম মোস্তফা কামালে ওই ঘোষণার পর আড্ডার ‘সরব’ মাশরাফি অনেকটাই নীরব হয়ে গেছেন। খুব কাছেরজন ছাড়া কারো ফোনই রিসিভ করছেন না। সবচেয়ে বড় কথা নির্বাচন প্রসঙ্গে কারো সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কথোপকোথনেও যেতে রাজ্যের অনিহা।
প্রথমে নির্বাচন করা প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি। পরে দুটি কথাই শুধু বলেছেন, ‘আসলে কামাল ভাই (আ হ মুস্তফা কামাল) যা বলেছেন, সেটা তার কথা। আমি সে সম্পর্কে কিছুই জানি না।’ আওয়ামী লিগ তথা নৌকা প্রতীক নিয়ে আসন্ন সংসদ নির্বাচন করবেন কি? এ প্রশ্নর জবাবে, মাশরাফির জবাব, ‘এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না আমি। প্লিজ আমাকে কিছু বলতে অনুরোধ করবেন না। এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।’
সবার জানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খেলার প্রতি অনুরাগ প্রবল। সফল ক্রিড়াবীদ, বিশেষ করে ক্রিকেটার মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক আর তামিম- চারজনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য। বিভিন্ন সময় তিনি তাদের মাতৃস্নেহে কাছে টেনে নেন। জাতীয় দলের নানা অর্জন, প্রাপ্তি ও ঐতিহাসিক সাফল্যে দেশের বাইরে মাশরাফি-সাকিবদের সঙ্গে ফোনেও কথা বলেন। অনুপ্রেরণা জোগান।
তাই এটা শতভাগ সত্য যে, শেখ হাসিনার প্রতি মাশরাফি-সাকিবের রয়েছে অন্যরকম শ্রদ্ধা ও আন্তরিক ভালোবাসা। আগেরদিনও মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর ইফতারে শেখ হাসিনার হাতে ফুলের তোড়া উপহার দেন। বোর্ডের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে মাশরাফি ও সাকিবকে এবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর কথা না বললেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাশরাফিকে নির্বাচনের মানসিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
মাশরাফির ঘনিষ্ট সূত্রেও মিলেছে তেমন আভাস। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর ইফতারেও নাকি মাশরাফিকে নির্বাচন করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পেশাজীবীদের সম্মানে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ইফতারে অংশ নেয়া একাধিক ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব নিশ্চিত করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ইফতারে সত্যিই মাশরাফির নির্বাচনে দাঁড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লিগের নীতি নির্ধারক মহল থেকেই মাশরাফিকে সামনের নির্বাচনের দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
একদম ভেতরের খবর, যেহেতু সামনে বিশ্বকাপ (২০১৯) এবং বলার অপেক্ষা রাখে না, ৩৪ বছর বয়সী মাশরাফির ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। মাশরাফি ওই বিশ্ব আসর খেলতে মুখিয়ে আছেন। এখন তার ধ্যান, জ্ঞান, চিন্তা-চেতনার সবটুকু জুড়ে বিশ্বকাপ। তার আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জড়িয়ে পড়তে নীতিগতভাবে রাজি নন মাশরাফি। তবে ওপরের মহলের পীড়াপীড়ি হলে ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে মাশরাফি সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গেলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি