২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:৫৭

ঢাবিতে সন্ধ্যা নামলেই চলে নেশা, প্রশাসন নিরব

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সন্ধ্যা নামলে বিভিন্ন এলাকাতেই এক রকম ভোটকা গন্ধে ভারী হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাস বাসীদের কাছে মোটেই তা অপরিচিত নয়। এই গন্ধের সঙ্গে নিরুপায় একাকার হয়ে আছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। নেশাদ্রব্য গাঁজার গন্ধে ভারী হয় ক্যাম্পাসের বাতাস। আর বিভিন্ন হল ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকার নালা-নর্দমায় একের পর এক লুটিপুটি খায় ফেনসিডিলের খালি বোতল।

কিন্তু তো রোধে দৃশ্যত কোনো তৎপরতা নেই প্রশাসনের। প্রক্টরিয়াল বডি বলছে, এ ব্যাপারে তাদের দায় নেই, এটি দেখবে পুলিশ প্রশাসন। তাহলে ক্যাম্পাসের নৈশ প্রহরীরাই বা আর কী করবেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নৈশ প্রহরী বলেন, ‘আমাদের নিষেধ কেউ শোনে না। উপরন্তু নিষেধ করলে আমাদের শুনতে হয় গালি, খেতে হয় মার।’ তাই না দেখার ভান করেন তারা।

ক্যাম্পাসে কারা মাদক সেবন করে- এই প্রশ্নের উত্তর সহজে শিক্ষার্থীদের কাছে পাওয়া যায়। কিন্তু কাদের মাধ্যমে ও কীভাবে ক্যাম্পাসে মাদক ঢুকে- এ ব্যাপারে অত সহজে সরাসরি নাম বলতে অপারগ অনেকে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চারটি এলাকা দিয়ে মাদক ঢুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। একটি হলো কামরাঙ্গীরচর-কেরানীগঞ্জ হয়ে আজীমপুর দিয়ে। দ্বিতীয়টি সদরঘাট-পুরান ঢাকা ও চানখারপুল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

এছাড়া মাদকের দুটি বড় চালান ক্যাম্পাস ঢোকে কমলাপুর-শাহাবাগ ও চট্টগ্রাম-ধানমন্ডি হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই চারটি রুট দিয়ে আসা মাদকদ্রব্য হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে রিকশাচালক ও পথশিশুরা। এই ব্যবসার জন্য তারা বেছে নেয় ক্যাম্পাসের ময়লা ফুটপাতগুলো যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরদারি নেই বললেই চলে।

সম্প্রতি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রীক মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ৩৮ জনের নাম রয়েছে।

তাদের মধ্যে ২০ জন হলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। যুবলীগের দুজন নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্যের নামও রয়েছে তালিকায়। বাকি ১৫ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা নেই। তালিকায় নাম আসা এই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপরন্তু তাদের অভিযোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই তালিকা সম্পূর্ণ নয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই সব। তারা যেভাবে চায় সেভাবেই তাদের সহায়তা করবে প্রশাসন। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি তাদের। ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত রাখতে চান তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মাদকের ব্যবসা ও সেবন চলে। এসব বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো অভিযান চালাবে কি না, জানতে চাইলে প্রক্টার বলেন, ‘এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এখতিয়ার। আর কর্তৃপক্ষ শুধু তাদের সহায়তা করতে পারে।’

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মে ২৪, ২০১৮ ১২:৪৭ অপরাহ্ণ