নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লা ও নড়াইলের দুই মামলায় জামিনের আবেদনের ওপর শুনানি গতকাল শুরু হয়েছে। বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ সংক্রান্ত শুনানি শুরু হয়। গতকাল খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানি করেন। শুনানি শেষে আজ দুপুর ২টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আদালত।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়া, কায়সার কামাল প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা দুটি মামলা এবং নড়াইলে মানহানির অভিযোগে করা একটি মামলায় জামিন পেতে ২০শে মে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। পরে দুটি মামলায় জামিনের আবেদন শুনানির জন্য সোমবারের কার্য তালিকায় আসে। ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানির প্রস্তুতির জন্য সময়ের আর্জি জানালে আদালত মঙ্গলবার সময় নির্ধারণ করেন।
খালেদা জিয়া কুমিল্লার দায়রা জজ আদালতে জামিনের জন্য যে আবেদন করেছেন সেই আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা যায় কিনা- আদালত তা জানতে চান। জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব আদালতকে জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুসারে জামিনের ক্ষেত্রে সেশন কোর্টের (দায়রা আদালত) যে ক্ষমতা, হাইকোর্টেরও সেই ক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, কুমিল্লার আদালতে জামিন শুনানির জন্য লম্বা সময়ের তারিখ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে জামিন শুনানরি জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই আদালত (কুমিল্লার আদালত) কোনো আদেশ দেননি। তিনি বলেন, বিচারিক আদালতে এই মামলাগুলোয় দ্রুত জামিনের আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় কালক্ষেপণ হচ্ছে। এতে করে খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্বিত হচ্ছে। এখন খালেদা জিয়ার জামিন এবং কারামুক্তি যাতে বিলম্বিত না হয় এ জন্যই হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে।
শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এই মামলার (কুমিল্লার হত্যা মামলা) এজাহারে খালেদা জিয়ার নাম ছিল না। পরবর্তীতে চার্জশিটে (অভিযোগপত্র) তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেখানে তাকে ৫১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। যে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে, সেখানেও তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট করে কোনো অভিযোগ উল্লেখ করা হয়নি।
এ সময় আদালত এ মামলায় সম্পূরক চার্জশিট সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দাখিলকৃত প্রথম অভিযোগপত্রে ৭৭ জনকে আসামি করা হয়। আর সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসামি করা হয় ৭৮ জনকে। তিনি বলেন, এই মামলায় যারা গ্রেপ্তার আছেন, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং যারা এজাহারভুক্ত ও চার্জশিটভুক্ত মূল আসামি তাদের প্রায় সবাই জামিনে আছেন। শুনানির একপর্যায়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা রুল চাই না। আমরা জামিন চাই।
নড়াইলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা প্রসঙ্গে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এই মামলায় আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিচারিক আদালতে আবেদন দাখিল করে বলেছিলেন, যেহেতু এই মামলা জামিনযোগ্য তাই খালেদা জিয়াকে প্রডাকশন ওয়ারেন্ট (পিডব্লিউ) সহ আদালতে হাজির করা হোক এবং তার জামিন মঞ্জুর করা হোক। কিন্তু এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তারও দেখানো হয়নি, প্রডাকশন ওয়ারেন্টও দেয়া হয়নি। আর জামিনের আবেদনও বিবেচনা করা হয়নি। আবেদনগুলো নথিজাত করা হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত আজ ২টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
গতকাল শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে ছয়টি মামলা বিচারাধীন আছে। কারামুক্তির জন্য এই ছয়টি মামলায় তাকে জামিন নিতে হবে। এটি সরকারের অপচেষ্টা যাতে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি বিলম্বিত হয়। তিনি বলেন, এই মামলায় (কুমিল্লার হত্যা মামলা) সব আসামি জামিনে আছে। ওনার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে কোনোরকম অভিযোগ নেই।
এফআইআর-এ ওনার নাম নেই। জামিনে মুক্তি বিলম্বিত করার জন্য ওনাকে আসামি করা হয়েছে। মওদুদ আহমদ আরো বলেন, কতগুলো ভুয়া, ভিত্তিহীন, হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা দেয়া হয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। তবে, আমরা আশা করি তিনি জামিন পাবেন এবং শীঘ্রই আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আরো দুটি মামলায় জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানো ও তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে জাতির মানহানি ও ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ আবেদন করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাসুদ রানা। পরে মাসুদ রানা জানান, ‘আদালতের অনুমতি নিয়ে জামিনের এ আবেদন করা হয়েছে। আবেদন দুটি আগামী সপ্তাহে শুনানির জন্য কার্য তালিকায় আসতে পারে’।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, এ দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ১৭ই মে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। আগামী ৫ই জুলাইয়ের মধ্যে এ আদেশ কার্যকর করে আদালতকে অবহিত করতে বলা হয় বিচারিক আদালতের আদেশে।
বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩রা নভেম্বর ঢাকার আদালতে জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী একটি মামলা করেন। আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩০শে আগস্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়। আইনজীবীরা জানান, মামলা দুটিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। কিন্তু পুলিশ তা তামিল করতে পারেনি। গতকাল মামলা দুটির ধার্যদিনে খালেদার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার জামিনের আবেদন করেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি