নিজস্ব প্রতিবেদক:
সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে ১১ ধরনের অবৈধ জাল দিয়ে মাছের পোনা ধরা নিষিদ্ধ। সেই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা নিষিদ্ধ জাল নিয়ে পোনা আহরণ করছেন। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার ফেরদাউস আনসারী। নিষিদ্ধ জালের মধ্যে বেহুন্দি (বেন্দি), কারেন্ট, বুনো, বাঁধা, নেট, খালপাটা, টোনা, জাপানি কারেন্ট, ফাঁন্দি, ফাঁস, চাপা, বাঁধা ও কাঠি উল্লেখযোগ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য প্রজননের এ মৌসুমে পশুর নদীসহ সুন্দরবনের নদী-খাল সমূহ কয়েক হাজার জেলে ও নারী-শিশু মাছের পোনা শিকার করছে। একটি চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করতে গিয়ে জালে অন্তত ৭০ প্রজাতির মাছ আটকা পড়ে। সচেতনতার অভাবে কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের হাতে মারা পড়ছে এসব মাছের পোনা। এতে মাছের প্রজনন ও উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আর হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে সুন্দরবন উপকূলের মৎস্য সম্পদ।
তবে নিষিদ্ধ এ জাল মোংলার বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, এসব জাল বিক্রি করা যাবে না, এমন কোনও নির্দেশ পাইনি। মোংলা বাজারের ‘বাগেরহাট স্টোরের’ মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ‘এসব জাল তো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। নিষেধাজ্ঞার কথা শুনিনি। ক্রেতারা প্রতিদিনই কোনও না কোনও কাজে এসব কিনে নিচ্ছেন, আমরাও বিক্রি করছি।’
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরে ১১ ধরনের অবৈধ জাল দিয়ে মাছের পোনা শিকার করা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা রয়েছে। এসব জাল দিয়ে পোনা ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’ বাজারে জাল বিক্রি হলেও কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না- জানতে চাইলে কামরুল বলেন, ‘এটা ফিশারিজের (মৎস্য অধিদফতর) ব্যাপার। তারা কেন ব্যবস্থা নেয় না তারাই এটা ভালো বলতে পারবেন। তবে সুন্দরবনের ভেতরে এসব নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছের পোনা শিকার করলে তখন আমরা ব্যবস্থা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযান চালিয়ে গত ছয় মাসে আমরা শতাধিক নিষিদ্ধ জালসহ আট জেলেকে আটক করি এবং মামলা দিয়ে জেলে পাছিয়েছি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা উপজেলা মৎস্য অফিসার ফেরদাউস আনসারী জানান, বেহুন্দি (বেন্দি), কারেন্ট, বুনো, বাঁধা, নেট, খালপাটা, টোনা, জাপানি কারেন্ট, ফাঁন্দি, ফাঁস, চাপা, বাঁধা ও কাঠি জাল দিয়ে সুন্দরবনসহ নদ-নদীতে মাছের পোনা শিকার করা যাবে না। এসব জাল দিয়ে পোনা শিকার করলে প্রথমবার ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা এক বছরের জেল, পরবর্তী বছরে আবারও যদি একই এই অপরাধ করেন তাহলে দুই বছরের জেল দেওয়ার বিধান রয়েছে।
.বাজারে প্রকাশ্যে এসব জাল বিক্রির বিষয়ে এ মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যখন অভিযান করি তখন ব্যবসায়ীরা বলেন, এসব জাল গরুর মশারি, বাড়ির বেড়া, পুকুর ঘেরাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য কেনে। এজন্য তাদের চিহ্নিত করতে পারিনা।’ তিনি বলেন, ‘যখন একজন জেলের কাছে পাওয়া যাবে তখন এটা নিষিদ্ধ জাল। এছাড়া ধরার কোন উপায় নাই।’ =
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি