নিজস্ব প্রতিবেদক:
কাঁচা ও অপরিপক্ক ফলকে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হয় এটা লোক চোখে পড়েছে অনেক আগেই। তবে তাপ দিয়ে ফল পাকানোর কথা অনেকেরই অজানা। যে পদ্ধতিটি এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে। এতে ফলের স্বাদ যেমন কমেছে, একই সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও। যেকোনো উৎসবকে পুঁজি করে বেশি দামে ফল বিক্রির লোভে তাপ দেওয়ার পদ্ধতিটি হাতে নেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে ভোক্তার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকলেও ব্যবসায়ীদের পকেট ভরছে নিয়মিত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এ পদ্ধতি রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। প্রতিটি ফলের আড়তেই এখন দেখা মিলছে এভাবে ফল পাকানোর দৃশ্য। ফলভেদে পাকানোর সময়ও ভিন্ন। কোনো কোনো ফল এভাবে পাকাতে দুই দিন থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অপরিপক্ক যেকোনো ফলই তাপ দিয়ে পাকানো সম্ভব। এ তাপ পদ্ধতিতে আম পাকাতে তিন দিন সময় লাগে। পেঁপে দুই দিন, কলা চার দিন। এভাবে ফল পাকানোর পর এখান থেকেই পাইকারি দরে বিক্রি হয়। পরে খুচরা ক্রেতাদের মাধ্যমে তা চলে যায় রাজধানীর বিভিন্ন বাজার বা অলি-গলিতে।
এ বিষয়ে মায়ের দোয়া ফল ভাণ্ডারের মালিক আলমগীর বলেন, হিট দিয়ে ফল পাকানো হলেও কোনো রাসায়নিকের ব্যবহার নেই। এক্ষেত্রে ফলটি নিরাপদ। যদিও পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন হিট দিয়ে পাকানো ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। আল আমিন আজাদ নামে এক ভোক্তা বলেন, হিট দিয়ে ফল পাকানোর কারণে ফলের স্বাদ আগের মতো পাওয়া যায় না। আগে একটি পেঁপে যেমন মিষ্টি লাগত, এখন সেটা মনে হয় না। তবে এতে প্রশাসনের নজরদারি থাকলে হয়ত এভাবে ফল পাকাতে পারতেন না ব্যবসায়ীরা।
বাজারে যেসব পাকা ফল দেখা যায় সেগুলো গাছে পাকা ফল বলে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এই পাকা ফলটিই হিট দিয়ে পাকানো হয় কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন আড়তে। কারওয়ান বাজারের প্রায় প্রতিটি ফলের আড়তের মধ্যেই রয়েছে ইট দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের ছোট ছোট ঘর। এই ঘরের মধ্যে একটি ছোট দরজা থাকে। দরজা দিয়ে ফলগুলো ভালো করে সাজানো হয়। মাঝখানে একটা ফাঁকা জায়গা রাখা হয়। সেই জায়গাতে কাঠের গুঁড়োর আগুন দিয়ে ধোঁয়া তৈরি করা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে চলতে থাকে আগুন ও ধোঁয়া। এই আগুনের হিটেই অপরিপক্ক ফলগুলো লাল আকার ধারণ করে। পরে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সেটি ছড়িয়ে পড়ে।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, এ ধরনের ফল খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। একই সঙ্গে ফলের পরিপূর্ণ কোনো গুণাগুণ থাকে না। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, হিট দিয়ে পাকানো ফলের পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে না। এটাতে অনেক সময় পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। এ ধরনের ফল খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণই বেশি হবে। তিনি বলেন, এসব ফল খেলে এলার্জিসহ নানা ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণ ভোক্তাদের এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন এ পুষ্টিবিদ। একই সঙ্গে প্রশাসনকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ারও আহবান জানান তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম অজিয়র রহমান বলেন, প্রশাসন এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। আশা করছি, কম সময়ের মধ্যেই এটার একটা সমাধান পাওয়া যাবে। তিনি এও বলেন, বর্তমান সরকার এবার আম খাওয়ার ব্যাপারে জেলাভিত্তিক নির্দেশনা দিয়েছে। তাছাড়া প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি