নিজস্ব প্রতিবেদক:
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সভার কার্যবিবরণীর মূলকপি গায়েব হয়ে গেছে। ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠনের পর ৯৫টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৯০টি সভার কার্যবিবরণীর মূলকপি কর্তৃপক্ষের দফতরে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে কর্মরত কর্মকর্তারা কোনো তথ্যও দিতে পারছেন না।
বাধ্য হয়ে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে আইডিআরএ। সম্প্রতি এক চিঠিতে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, আইডিআরএ ২০১১ সালে গঠিত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদস্যদের যোগদানের পূর্বপর্যন্ত ৯৫টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাগুলোর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, চতুর্থ, ঊনিশ ও তেইশতম সভার বিবরণী কর্তৃপক্ষের দফতরে রয়েছে। বাকি ৯০টি সভার বিবরণীর মূলকপি কর্তৃপক্ষের দফতরে নেই।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ-তে কর্মরত কর্মকর্তারা কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সাবেক চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ এ কাজ করেছেন। তার সময়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নেয়া সংক্রান্ত বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এসব তথ্য লুকানোর জন্যই তিনি এসব ফাইল গায়েব করে ফেলতে পারেন বলে তাদের ধারণা।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আগের চেয়ারম্যান শেফাক আহমেদের মেয়াদ শেষ হওয়ার সাত মাস পর আমি দায়িত্ব নিয়েছি। এ সময়ে কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বর্তমান সদস্য গকুল চাঁদ দাস।’
তিনি বলেন, ‘সভার ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না, এটা সত্য। কিন্তু এগুলো কেন পাওয়া যাচ্ছে না, কোথায় আছে, কিংবা কে গায়েব করেছে- সেটা আমার জানা নেই। এটি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (গকুল) বলতে পারবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আইডিআরএ’র ৯৫তম সভা থেকে পরবর্তী সব সভা কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব সভার কার্যবিবরণী সরকারের অবগতির জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট নিয়মিতভাবে পাঠানো হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের দ্বিতীয়বারের চুক্তির মেয়াদ ২০১৭ সালের এপ্রিলে শেষ হয়। তার সভাপতিত্বে কর্তৃপক্ষের ১ থেকে ৯৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে শুধু মাত্র ৬৬তম সভা কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কুদ্দুস খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সভার কার্যবিবরণীও নিয়মিত প্রস্তুত করতে হয়। কিন্তু এসব এখন পাওয়া যাচ্ছে না।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের শাখা হতেই সভা আহ্বান, আলোচনার সূচি নির্ধারণ, সভা শেষে কার্যবিবরণী প্রস্তুত এবং বাস্তবায়ন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্য সম্পাদন হতো। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ৬৮ ও ৯১তম সভায়ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের সময়ে সভার সব দায়িত্ব চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব জাহিদ আহমেদ পালন করতেন। তিনি শেফাকের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর আর অফিস করেননি। পরবর্তীতে তিনি আইডিআরএ থেকে পদত্যাগ করেন।
তারা আরও জানান, সাবেক চেয়ারম্যানের (এম শেফাক) মেয়াদের শেষ সভার তিনটি কার্যবিবরণী তার অফিসে পাওয়া যায়। অন্য কোনো সভার কার্যবিবরণীর মূলকপি নথিতে পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, শেফাকের নেতৃত্বে ২০১৭ সালের ৪ এপিল সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার কার্যবিবরণীতে তিনি স্বাক্ষর করেননি। আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও ৯৫তম সভার কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর নেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে ওই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়নও করা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, ‘৯০টি সভার কার্যবিবরণীর মূলকপি আমাদের কাছে নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও এগুলো পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষের কর্মরত কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে অবগত নন বলে আমাদের জানিয়েছেন। এ অবস্থায় আমরা বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কে গায়েব করেছেন এটা জানা নেই। জানলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতাম না। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে সাবেক চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ আমেরিকায় অবস্থান করছেন। এ কারণে তার
সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
দৈনিক দেশজন /এন এইচ