২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:২৫

ব্যাংক মালিকদের চাপে কমানো হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদ!

অর্থনীতি ডেস্ক:

বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চাপে এবার কমানো হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদ। বিএবি’র নেতাদের ধারণা, সঞ্চয়পত্রের সুদ কমলে ব্যাংকিং খাতে তারল্য বাড়াতে সহায়ক হবে। এর ফলে ব্যাংক ঋণে সুদ হার এক অঙ্কে নেমে আসবে। সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোর জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে চিঠিও দিয়েছে বিএবি’। এছাড়া অচিরেই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বিএবি’র নেতাদের এ নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএবি সভাপতি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাংক ঋণে সুদ হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য আমরা সবাই চেষ্টা করছি। সরকারও চেষ্টা করছে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আমরা ব্যাংক খাতে সুদ হার কমাতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছি। দেশে বিনিয়োগের স্বার্থে সরকারি ব্যাংকে পড়ে থাকা অলস অর্থ আমরা কাজে লাগাতে চাচ্ছি।

তিনি উল্লেখ করেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় হলে, ব্যাংক আমানতে সুদ হারও কমে আসবে। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে অচিরেই বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত,সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার কথা বলে সরকারের কাছ থেকে এ পর্যন্ত চার ধরনের সুবিধা নিয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা ঋণের সুদহার কমাননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে সুদের হার বেড়েছে।

এদিকে সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি চিঠিতে এই তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের কারণে সার্বিকভাবে আর্থিক খাত ও বন্ড বাজারের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের সুদহার অর্থবাজারে বিদ্যমান সুদহারের চেয়ে বেশি হওয়ায় সরকারের দায় বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মাহফুজা আকতার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের সুদহার যৌক্তিকীকরণের বিষয়টি সরকার সুবিবেচনায় নিতে পারে।

সরকারের অর্থবিভাগ থেকেও বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্র বিক্রির ফলে সুদ বাবদ সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হবে, যা স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে সরকারের বাজেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। এমন পরিস্থিতিতে সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার রিভিউ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে আগামী বাজেটের পর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। গত ১২ মে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী জানান, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের পর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় (কমানো) হবে।  অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কিছুটা বেশি বলে সব পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

যদিও গত বছর বাজেটের আগে তিনি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রও বলছে, বাজেটের পর সঞ্চয়পত্রে সুদের হার দুই শতাংশ পর্যন্ত কমানো হতে পারে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নীতিমালাতেও বেশকিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমাতে সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এর আগে ২০১৫ সালের মে মাসে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দুই শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছিল।

এদিকে অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ ও পেনশনভোগীরা। আবার অর্থনীতিবিদরাও বলেছেন, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমালেই যে ব্যাংক খাত চাঙ্গা হবে এর কোনও গ্যারান্টি নেই।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সঞ্চয়পত্র কেবল সঞ্চয়ী উপকরণ বললে ঠিক হবে না। এটি এক ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী। মুনাফার সঙ্গে মানুষ যেখানে নিরাপত্তা পাবে সেখানেই যাবে। এ কারণে, সঞ্চয়পত্রকে লাভ-ক্ষতির ভিত্তির বিবেচনায় না দেখে অনেক স্বল্প আয় বা নির্দিষ্ট আয় বা পেশনভোগীর স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিতে হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এখন ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৯ মাসে ( জুলাই- মার্চ) ৬০ হাজার ১২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সরকার এই সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। যা গোটা অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১২১.৭৫ শতাংশ।

দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ

প্রকাশ :মে ২০, ২০১৮ ১:৪০ অপরাহ্ণ