২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৪৫

বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মাছের প্রজনন ও সর্বোচ্চ সংরক্ষণের স্বার্থে আজ থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার নিষিদ্ধ হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে ৩ জুলাই মধ্য রাত পর্যন্ত। এই ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী শামস আফরোজ জানিয়েছেন, সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য গভীর সমুদ্রে বাণিজ্যিক ট্রলারে টানা ৬৫ দিন মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর পার্ট ১১ রোলস ৫৫ (২) বি-এর ক্ষমতাবলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই সময়ে বঙ্গোপসাগরের বাণিজ্যিক ট্রলারে মাছ ধরা যাবে না। কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২০ মে মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স ৫৫ ধারার ক্ষমতাবলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গেজেট জারি করা হয়। গেজেটে বলা হয়, ‘বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সর্বোচ্চ সংরক্ষণের স্বার্থে প্রত্যেক বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই মোট ৬৫ দিন মাছ ও চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ করা হলো।’ সরকারি এই গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করা হলেও তা খারিজ করে দেওয়া হয়। এতে করে সরকারি গেজেটে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ শিকার বন্ধ থাকছে।

বাংলাদেশের জলসীমার আয়তন প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। যা বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের চেয়ে বড়। টেকনাফ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সাগরের দিকে ২০০ নটিক্যাল মাইলের বিশাল এই জলসীমায় চারটি ফিশিং জোন রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সোয়াস অব নো গ্রাউন্ড, সাউথ অব সাউথ প্যাসেজ, সাউথ প্যাসেজ ও মিডল গ্রাউন্ড। বঙ্গোপসাগরের এই বিস্তৃত এলাকা থেকে বছরে গড়ে এক লাখ টনেরও বেশি মৎস্য শিকার করা হয়।

বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৬০ হাজার টন হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি করে। এগুলোর মধ্যে ইলিশ, পোয়া, রূপচান্দা, দাতিনা, ছুরি, চউখ্যা, কাঁটা মাছ, লাক্ষা, কামিলা, রূপবান, রাঙা চউখ্যা, লাল মাছ, মাইট্টা, লইট্টা, আইল্যা, বাগদা, চাগা, বাগাচামা, হরিণা, লইল্যা, নুইল্যা, নূয়া চাই, কাঁকড়া, স্কুইড ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। দেশিয় ট্রলার এবং নৌকা ছাড়াও আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ১৭০টির মতো জাহাজ গভীর সাগরে মাছ শিকার করে। অত্যাধুনিক এসব জাহাজ সাগরে ফিশিং করতে গেলে পানির তলদেশে মাছের অবস্থান এবং চলাচলের পথ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই জাল ফেলে। সর্বাধুনিক ‘সুনার’ ব্যবহার করে সাগরের ৬০০ থেকে ৭০০ ফুট গভীরের অবস্থা জাহাজের ডেকে মনিটরে বসে জানা যায়।

মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের জলসীমা বহু বৃদ্ধি পেয়েছে। সাগরের এতো গভীর থেকে মাছ শিকার করার মতো প্রযুক্তি বাংলাদেশের হাতে না থাকায় কোটি কোটি টাকার মাছ চুরি হয়ে যায়। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভারতীয় অত্যাধুনিক জাহাজগুলো এসে এখান থেকে মাছ ধরে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে দেশিয় কয়েকটি কোম্পানি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ জাহাজ দেশে নিয়ে আসায় মাছ শিকারে আগের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশের বিস্তৃত জলসীমায় বহু মাছ রয়েছে যেগুলো বছরের কোনো না কোনো সময় মাইগ্রেট হয়ে ভারত, মিয়ানমার কিংবা থাইল্যান্ডের দিকে চলে যায়। আবার বহু মাছ রয়েছে যেগুলো আয়ুস্কাল ফুরিয়ে গেলে মারা যায়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আনার ফলে এসব মাছ শিকারেও অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মে ২০, ২০১৮ ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ