নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পরই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি চাকরিজীবীদের খুশি রখতে আগামী বাজেটেই ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সরকারকে সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এর আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি চাকুরেদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) হবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন বাড়ানোটা দুরূহ ব্যাপার। সে ধরনের অবকাঠামো এখনো গড়ে উঠেনি। তাই মূল বেতনের ১০ বা ১৫ শতাংশ ডিএ (ডেইলি অ্যালাউন্স) হিসেব বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে। আর এই ঘোষণা অর্থমন্ত্রী আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করতে পারেন।
সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বশেষ অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এতে প্রতিবছর সরকারি চাকরিজীবীদের ৫ ভাগ হারে ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭ সালে মার্চ মাসে ঘোষণা দেন যে, এখন থেকে আর কোনো নতুন পে-কমিশন ঘোষণা করা হবে না।
প্রতি বছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি চাকুরেদের বেতন সমন্বয় করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি করে দেয়া হবে। তারাই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করবেন। এরই আলোকে ২০১৭ সালের ৯ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই কমিটির গঠন করা হয়। ৯ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে (সমন্বয় ও সংস্কার)।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, পে-কমিশন আর হবে এটা মুখে বলা হয়েছে। কিন্তু কাগজে কলমে এ বিষয়ে ক্লিয়ার কিছু নেই। পে-কমিশন গঠন না করে বেতন বাড়ানোর বিষয়ে যে প্রস্তুতি দরকার তা এখনো অনুপস্থিত। সরকার যখন ভাববে যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসন্তুষ্ট হচ্ছে তখন- যেমন এখন মূল্যস্ফীতির কারণে একটু অসন্তুষ্টি শুরু হয়ে গেছে। তাছাড়া সামনে নির্বাচন রয়েছে, এটা (বেতন) ২০ শতাংশও বাড়ানো হতে পারে। তবে কত শতাংশ বাড়ানো হবে সেটা নিয়ে এখন স্ট্যাডি চলছে।
এদিকে ২০১৭ সালের ৯ মে যে কমিটিটি গঠন করা হয়েছিল তার নাম ছিল- সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ বেতনভাতা নির্ধারণ ও পরিবর্ধনের বিষয় পর্যালোচনা সংক্রান্ত কমিটি। ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও অর্থ বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি।
কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, কমিটি সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখার এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয়করণের উপায় নির্ধারণের লক্ষ্যে সার্বিক বিষয় বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক একটি সুচিন্তিত সুপারিশমালা প্রণয়ন করবে। এই কমিটিও একটি প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়- বেতন বাড়ানোর জন্য মূল্যস্ফীতির বেইস ধরা হয়েছে ৫ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশ ছাড়ালেই সরকারি চাকরিজীবিদের বেতন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে। এরপরও যদি মূল্যস্ফীতি বাড়ে অর্থাৎ ৬ শতাংশ বা ৭ শতাংশ, তখন সেহারে বেতন বাড়বে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কমিটি।
কমিটি বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের ব্যাপারে প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে। এক্ষেত্রে ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হতে পারে। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, প্রতি ৫ বছর পর পর পে-কমিশন গঠণ না করে এর বিকল্প ভাবতে হবে। বিকল্প হিসেবে অর্থমন্ত্রণালয়ে একটি স্থায়ী সেল গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে অর্থ বিভাগ বলছে, এখনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্যস্ফীতির ওপর ভিত্তি করে সরকারি চাকরিজীবিদের বেতন-ভাতা বাড়ানো মতো অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। তাই তারা ডিএ (ডেইলি এলাউন্স) হিসেবে মূল বেতননের ১০ বা ১৫ শতাংশ বাড়ানো পক্ষে।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সুতরাং সরকারকে সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের এভাবে বেতন বৃদ্ধি করলে বেসরকারি খাত থেকেও বেতন বাড়ার দাবি আসবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের জন্য বেতন না বাড়ালে সমাজে একটা বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়লে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। যার দুর্ভোগ অন্যান্যদের পোহাতে হবে।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালে সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল। তার আগে ২০০৯ সালে বাড়ানো হয়েছিল সরকারি চাকুরেদের বেতন। নিয়ম অনুযায়ী অন্তত পাঁচ বছর পর বেতন-ভাতা বাড়ানোর কথা থাকলেও এ বছর নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় আগাম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।