নিজস্ব প্রতিবেদক:
নগদ অর্থের টান চলছে ব্যাংকে। ফলে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলছে সুদের হার। কিছুতেই এর লাগাম টানা যাচ্ছে না। ভোক্তা ও গৃহঋণের সুদও বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে চলছে ব্যাংকের তারল্য সংকট। ঋণের চাহিদাও বেড়েছে। এছাড়া খেলাপি বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে নগদ অর্থের সংকটে রয়েছে ব্যাংকগুলো। সুদের হার কমাতে সরকারি উদ্যোগ ও ব্যাংকারদের নানামুখী তৎপরতাও কাজে আসছে না। হু-হু করে বেড়ে চলেছে সুদের হার। যা বিনিয়োগের জন্য শুভকর নয়। এ প্রবণতা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও জানান তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, দেশের ব্যাংকগুলোতে ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত ঋণের গড় সুদের হার ছিল ১২ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে। ২০১৭ সালে তা ১০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চশেষে ব্যাংকিং খাতে গড় আমানতের সুদহার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর ঋণের সুদহার দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭০ শতাংশে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় ঋণের হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
এদিকে গত ডিসেম্বর থেকে সুদের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে গড় ঋণের সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জানুয়ারিতে তা দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৪২ শতাংশে। ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে ব্যবসা পরিচালনার খরচ অনেক বেশি। এর মধ্যে ঋণের সুদহার ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। এ কারণে খরচ আরও বেড়ে যাবে।
‘ব্যাংকগুলোতে খেলাপি বেড়ে যাওয়ায় প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। আমানতের টাকা সঠিক স্থানে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে সুদহার বাড়ছে। এটা কাম্য নয়। আমরা চাই ঋণের সুদহার সহনীয় পর্যায়ে থাকুক। তা না হলে ব্যবসার খরচ বেড়ে যাবে এবং পণ্যের দামও বাড়বে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ সমস্যার সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উদ্যোগ নিতে হবে, এটিকে একটি নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমানতের তুলনায় ঋণের চাহিদা বেশি। এ কারণে তারল্য সংকট শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে ব্যাংকগুলো। এ কারণেই সুদহার বাড়ছে।
এদিকে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের চাপে সরকারি তহবিলের ৫০ ভাগ অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আগে এ হার ছিল ২৫ ভাগ। অর্থাৎ সরকারি তহবিলের অর্থ ৭৫ ভাগ থাকত সরকারি ব্যাংকে এবং বাকি ২৫ ভাগ রাখা যেত বেসরকারি ব্যাংকে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর) এক শতাংশ কমিয়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশ করা এবং এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ করা হয়েছে। এরপরও ঋণের সুদহার বাড়ছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সভাপতি ও এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনাপর্ষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন সুদহার নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম। ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট চলছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারে এটি হঠাৎ বেড়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আবার এক অঙ্কে সুদহার নেবে যাবে।’
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)’র সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। ঋণের সুদহারও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ফলে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বা ব্যবসার ব্যয় বেড়ে গেছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে এখন বিশ্ব বাজারে টিকে থাকা বড় চ্যালেঞ্জ। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো মূল্যে সুদহার এক অংশে নামিয়ে আনা জরুরি।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ