খুলনা প্রতিনিধি:
কেন্দ্র দখল করে সিল মারা, বিরোধী দলের প্রার্থীর এজেন্টদের পিটিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া ও পুলিশের সহযোগিতায় জাল ভোট দেয়ার অভিযোগের মধ্য দিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
আজ সকাল ৮.০০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪.০০টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। ৪.০০ টার পর থেকে শুরু হয় গণনা।
ভোট চলাকালীন ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার ঘটনায় খুলনা মহানগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২০২ নম্বর ভোটকেন্দ্র ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় এবং ৩১নং ওয়ার্ডের ২৭৮ নম্বর কেন্দ্রের (ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়) ভোট বাতিল করা হয়। এছাড়া ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট বাতিলের লিখিত আবেদন করেছেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মাহবুব কায়সার। কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি’র ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে, ঢাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ১৯টি ওয়ার্ডের ৪০টি কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে খুলনা সিটির নির্বাচন। অন্যদিকে, বিএনপির কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
ইকবালনগর স্কুল কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার নুরুল ইসলাম জানান, এই কেন্দ্রে সাতটি বুথ ছিল। বেলা ১১টার দিকে স্কুলের একাডেমিক ভবন-২ সাত নম্বর বুথে ১৫-২০ জনের একটি দল আসে। তারা তার কাছ থেকে ব্যালটের বই ছিনিয়ে নিয়ে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর তিনি বিষয়টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারকে জানান। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বাতিল করে দেন।
বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু বলেন, ‘আমার এজেন্টদের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার খবর পেয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। খবর পেয়েছি ২২, ২৫, ২৯, ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কোনও কেন্দ্রেই বিএনপি’র এজেন্ট নেই। তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। ৩০টি সেন্টারের খবর পেয়েছি, যেখান থেকে আমার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।’
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
উল্লেখ্য, কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী রয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মনোনীত এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাতপাখা) ও সিপিবি মনোনীত মো. মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)। এছাড়া ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নির্বাচনে ভোটার চার লাখ ৯৩ হাজার ৯২ জন। এরমধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৫ ও নারী দুই লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্র ছিল ২৩৪টি এবং সাধারণ কেন্দ্র ছিল ৫৫টি। ভোটকক্ষ ছিল একহাজার ৫৬১টি। আর অস্থায়ী ভোটকক্ষ ৫৫টি। প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার ছিলেন চার হাজার ৯৭২ জন। এ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন ২১৯ জন। এরমধ্যে ৪-৫ জন বিদেশি, ৩৫ জন নির্বাচন কমিশনের এবং ১৭৯ জন বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষক।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ