নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাস চাপায় হাত হারিয়ে পরে প্রাণ খোয়ানো রাজীব হোসেনের পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ কবে বাস্তবায়ন হবে, সেটি এখন দেখার অপেক্ষা। তবে উচ্চ আদালত থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ এসেছে, এমন বেশ কিছু ঘটনায় ভুক্তভোগীরা দীর্ঘদিনেও সে টাকা পাননি।
এর মধ্যে তুমুল আলেচিত শিশু জিহাদের ঘটনাটিও রয়েছে। ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে কয়েকশ ফুট গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে যায় চার বছরের শিশুটি। প্রায় ২৩ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানে ক্যামেরা নামিয়েও ফায়ার সার্ভিস কোনো মানুষের ছবি না পাওয়ায় পাইপে জিহাদের অস্তিত্ব থাকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। এরপর উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। এর কয়েক মিনিট পর কয়েকজন তরুণের তৎপরতায় তৈরি করা যন্ত্রে পাইপের নিচ থেকে উঠে আসে অচেতন জিহাদ। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় উচ্চ আদালতে রিট আবেদনের পর ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্ষতিপূরণের পক্ষে রায় দেয় আদালত। এরপর পেরিয়ে গেছে ২৭ মাস। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পরিশোধের নাম নেই। দুই বছর আগে ফেব্রুয়ারিতে আদালতের আদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয় ওই বছরের ৯ অক্টোবর। এতে বলা হয়, রায় হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিসকে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু ৯০ দিন পার হলেও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কেউই জিহাদের পরিবারকে টাকা পরিশোধ করেনি।
ফলে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি কে. এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত একটি আবেদন করেন আইনজীবী আবদুল হালিম। আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি রুল জারি করে। রিটকারী আইনজীবী আবদুল হালিম বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনার পরেও জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় গত ২২ জানুয়ারি বিবাদীদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠাই। ওই নোটিশ পাওয়ার পরও কোনো জবাব না পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করা হয়। পরে শুনানি করে আদালত রেলওয়ে ও ফায়ার সার্ভিসকে জবাব দিতেও বলেছে।’
আদালত কী বলেছে, জানতে চাইলে আবদুল হালিম বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের জন্য কনটেস্ট করেছি। আদালত রুল দিয়েছে। প্রথমবার সতর্ক করা হয়েছে। দ্বিতীয়বারও সতর্ক করা হবে। পরে চূড়ান্ত রায় আসবে। তবে আমার মামলাটি পজেটিভ।’ নিহত শিশু জিহাদের বাবা নাসির ফকির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখনও টাকা পাইনি। ফায়ার সার্ভিস মামলাটি ঘুরাচ্ছে। তারা আপিল করেছে। ফাইল পেছনে নিয়ে রাখে। ফাইল আগায় আবার পেছনে নিয়ে যায়।’
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া অফিসার খোরশেদ আনোয়ার বলেন, ‘শুনেছি এই মামলায় আপিল করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’ আরেক বিবাদী রেলওয়ের অবস্থান জানতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল আলম বলেন, ‘এ ব্যাপারে তো আমি কথা বলতে পারব না। আপনি বরং আমাদের রেল অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’ তবে রেলের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি প্রতিবারই ফোন কেটে দেন।
গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় দুটি বাসের চাপায় হাত হারান তিতুমীর সরকারি কলেজের ছাত্র রাজীব হোসান। ১৬ এপ্রিল হাসপাতালে মারা যান তিনি। দুর্ঘটনার পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রাজীবের চিকিৎসার খরচ বহন করতে স্বজন পরিবহন মালিক ও বিআরটিসিকে নির্দেশ দেয়। আর গত ৮ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের বেঞ্চ রাজীবের পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন। স্বজন পরিবহন ও বিআরটিসি বাসকে সমান হারে এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
রাজীবের পরিবার বলতে আছে দুই ভাই। তারা দুজনই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। তারাই পাবে ক্ষতিপূরণের টাকা। ক্ষতিপূরণের ৫০ ভাগ টাকা পরিশোধ করে ২৫ জুনের মধ্যে এ সংক্রান্ত অগ্রগতির প্রতিবেদনও হাইকোর্টে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর বাকি ৫০ শতাংশ টাকা কীভাবে দিতে হবে সে বিষয়ে পরে আদেশ দেয়ার কথা জানিয়েছে আদালত।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি