নিজস্ব প্রতিবেদক:
ত্রি-ভূবনের সবচেয়ে মধুরতম শব্দ ‘মা’। মা উচ্চারণের সাথে সাথে হূদয়ে অতল গহীনে যে আবেগ ও অনুভূতি রচিত হয়, তাতে অনাবিল সুখের প্রশান্তি নেমে আসে। আজ বিশ্ব মা দিবস। এদিন মাতৃ অন্ত:প্রাণ সন্তানরা ‘জননী আমার তুমি, পৃথিবী আমার, মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে’-এই কথাটুকুন প্রমাণে প্রাণের সবটুকু ভালোবাসা ঢেলে দিতে বহুমাত্রিক চেষ্টা করেন।
তোমার তুলনা তুমিই ‘মা’ এই প্রতিপাদ্যে মা দিবস পালন নিয়ে উইকিপিডিয়া তুলে ধরেছে দুটি ইতিহাস। ‘মা দিবসের’ প্রচলন শুরু হয় প্রথম প্রাচীন গ্রিসে। সেখানে প্রতি বসন্তকালে একটি দিন দেবতাদের মা ‘রিয়া’ যিনি ক্রোনাসের সহধর্মিনী তার উদ্দেশ্য উদযাপন করা হতো। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় ‘মা দিবস’ পালিত হতো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। রোমানরা পালন করতেন ১৫ মার্চ থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে। তারা দিনটিকে উত্সর্গ করেছিলেন ‘জুনো’র প্রতি। ষোড়শ শতাব্দী থেকে এই দিনটি যুক্তরাজ্যেও উদযাপন করা হতো ‘মাদারিং সানডে’ হিসেবে। ইস্টার সানডের ঠিক তিন সপ্তাহ আগের রবিবার এটি পালন করেন তারা।
অপর ইতিহাস হলো-সর্ব প্রথম ১৯১১ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আমেরিকাজুড়ে মায়েদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ‘মাদারিং সানডে’ নামে একটি বিশেষ দিন উদযাপন করা হয়। এরপর আমেরিকার চৌহদ্দি ছাড়িয়ে মা দিবসটি সর্বজনীন করে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে আসেন জুলিয়া ওয়ার্ড নামের এক আমেরিকান। ১৮৭২ সালের মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার নিজের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে জুলিয়া ওয়ার্ড নিজে ‘মা দিবস’ পালন করেন। ১৯১৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। এরপর পৃথিবীর দেশে দেশে মা দিবস পালনের রেওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে।
পৃথিবীর সব দেশেই এই মা শব্দটিই কেবল সার্বজনীন। মা প্রথম কথা বলা শেখান বলেই মায়ের ভাষা হয় মাতৃভাষা। মা হচ্ছেন মমতা-নিরাপত্তা-অস্তিত্ব, নিশ্চয়তা ও আশ্রয়। মা সন্তানের অভিভাবক, পরিচালক, ফিলোসফার, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বড় বন্ধু। মায়ের দেহে নিউট্রোপেট্রিক রাসায়নিক পদার্থ থাকায় মায়ের মনের মাঝে সন্তানের জন্য মমতা জন্ম নেয়, মায়ের ভালোবাসার ক্ষমতা বিজ্ঞানের মাপকাঠিতে নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
ইসলামে মায়ের মর্যাদা অসীম। মাকে মহান আল্লাহ তা’য়ালা স্বীয় রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সালামের পরে সর্বোচ্চ আসন দিয়েছেন। সমাসীন করেছেন অভাবনীয় মর্যাদার আসনে। বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। বুখারী শরীফের হাদিসে আছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সালামের নিকট এক সাহাবা জিজ্ঞাসা করলেন “আমার উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বললেন “তোমার মায়ের”। সাহাবী আবার জিজ্ঞাসা করলেন “আমার উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বললেন “তোমার মায়ের”। সাহাবা আবার জিজ্ঞাসা করলেন “আমার উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বললেন “তোমার মায়ের”। সাহাবা আবার জিজ্ঞাসা করলেন “আমার উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বললেন “তোমার বাবার”।
মাকে স্মরণ করে জগদ্বিখ্যাত মনীষী আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, ‘আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি, অথবা যা হতে আশা করি, তার জন্য আমি আমার মায়ের কাছে ঋণী’। নেপলিয়নের সেই সার্বজনীন কথাটি খুব প্রসিদ্ধ – আমাকে একজন ভাল মা দাও, আমি তোমাদের একটি ভাল জাতি উপহার দেব। মাকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানানোর নির্দিষ্ট কোন দিন নাই। মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রতিটি মুহূর্তের। তারপরও বিশ্বের সকল মানুষ যাতে এক সাথে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে সে জন্য আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করা হয়।