খুলনা প্রতিনিধি:
আইন অনুযায়ী আজ রোববার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে প্রার্থীর প্রচার কার্যক্রম। সকালে নির্বাচনী মাঠে নেমেছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির মোবাইল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স। আগামী মঙ্গলবার খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচনী এলাকায় নামছে ১০ জুডিশিয়াল ও ৬০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক মোবাইল কোর্ট। যারা আচরণ বিধিমালা ও আইন লঙ্ঘন করবে, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে সাজা নিশ্চিত করার কথা এসব মোবাইল কোর্টের।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচার শেষ হচ্ছে আজ মধ্যরাতে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০-এর ৭৪ বিধি অনুসারে ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ করতে হবে। সে অনুযায়ী ১৩ মে মধ্যরাত থেকে আগামী ১৭ মে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো প্রচার চালানো যাবে না। এমনকি ওই সময়ে জনসভা, মিছিল ও শোভাযাত্রাও নিষিদ্ধ।
সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের বিষয়ে আশ্বস্ত করে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ ও ফল প্রকাশে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘনের চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রায় একই ধরনের কথা জানিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সোনালী সেন। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। শহরে প্রবেশের ৮টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ভোটের অনুকূল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে খুলনার নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভোটগ্রহণের সময় যতই এগিয়ে আসছে, সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ততই বাড়ছে চাপা আতঙ্ক। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ১১টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ও ছয়টি ওয়ার্ডে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। দুই দলের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে ভোটে সহিংসতার পরিবেশ তৈরি করছে।
এ বিষয়ে খুলনা জেলার সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, সাধারণ ভোটাররা চাপ অনুভব করছেন, তারা আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কিনা- তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আ’লীগ ও বিএনপির মেয়রপ্রার্থী দুজন প্রায় সমানে সমান। দুজনের কেউই মেয়রপ্রার্থী হতে চাননি। দুটি দল তাদের মনোনয়ন দিয়েছে। এখন নির্বাচন দুই প্রার্থীর মধ্যে নয়, আ’লীগ ও বিএনপির প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এ কারণে দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশের সহায়ক নয়। দুদলের নেতাদের বক্তব্যে সাধারণ ভোটারদের ওপর জোর খাটানোর ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি ওয়ার্ডে ১২ জন বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে ৭ প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি ৪টি ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী থাকলেও তা মেয়রপ্রার্থী জয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। অন্যদিকে বিএনপির দুই কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানিয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫ জন বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে জোরালোভাবে মাঠে নামছেন না।
এসব কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে আগাম জয় উৎসব সৃষ্টি করছে বলেও মন্তব্য করেছেন একাধিক নেতা। তবে সরকারের ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার অসুবিধা এ নির্বাচনে কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর প্রধান সমন্বয়কারী এসএম কামাল বলেন, মানুষ বিএনপিকে বর্জন করেছে। তারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন। বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে গেলে সাধারণ মানুষ এভাবেই আমাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা সাংগঠনিক সর্বশক্তি নিয়ে এ নির্বাচনে নেমেছি। আশা করছি জনগণ ভোট দিয়ে আমাদের জয়ী করবেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আমার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ গ্রেফতারের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র দখল হবে- এমনটিও শুনতে পাচ্ছি। তাই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছি। অন্যথায় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তবে তিনি জয়ের বিষয়ে আশাবাদী।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি