মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ পরাজিত হবে জেনে গাজীপুর সিটি নির্বাচন যেভাবে স্থগিত করা হয়েছে, সেভাবেই খুলনার নির্বাচনও স্থগিত করার ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিতের মধ্য দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জনগণের কাছে সরকারের আত্মসমর্পণ ঘটেছে। গাজীপুর নির্বাচন স্থগিতের যদি সত্যি কোনো কারণ থেকে থাকে, তাহলে সে কারণগুলো আগে শুধরে পরে তফসিল ঘোষণা করতো ইসি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনায় এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়াকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। খুলনা নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে অবস্থিত বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে তিনি খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি পুনরুল্লেখ করেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে চাই, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে।
কেসিসি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক এই নেতা বলেন, গাজীপুরে আওয়ামী লীগের লোক নির্বাচন স্থগিতে রিট করল, এটা তাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল; হঠাৎ এমনটা হয়নি। খুলনা সিটি নির্বাচন স্থগিতের ব্যাপারেও তাদের একটি রিট করা আছে, যেটা কজলিস্টে প্রকাশ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কমিশনকে অযোগ্য বলব না; তবে নির্বাচন পরিচালনা করার তাদের সামর্থ্য আছে কি না, সেটা দেখার বিষয়।
গয়েশ্বর রায় বলেন, যখন তফসিল ঘোষণা করা হয়, তখন সেই এলাকার সরকারি প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে চলার কথা। অথচ খুলনার প্রশাসন কাদের কথায় চলছে, এটা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে বারবার অভিযোগ করা সত্বেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখানে নির্বাচন কমিশন কতটুকু স্বাধীন, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
বিএনপি নেতা গয়েশ্বর বলেন, নির্বাচন কমিশন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে, আবার দেখলাম বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে তদারকি কমিটি গঠন করেছে; যা কোনো অবস্থায় হতে পারে না। রিটার্নিং কর্মকর্তা যেন তাঁর কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে না পারেন, এ জন্যই এই প্রক্রিয়া। আমরা দেখলাম, একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে; তাহলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাজটি কী? বলে প্রশ্ন রাখেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করুন এবং ভোটারদের দেয়া ভোট নিরাপদ করতে অবিলম্বে খুলনায় সেনাবাহিনী নিয়োগ করুন।
একজন যুগ্ম সচিবকে নির্বাচনে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়াকে নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও অভিযোগ করেন মঞ্জু।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড এখনো হয়নি। বলেছিলাম ভীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরীতে পদক্ষেপ নিতে হবে। চেয়েছিলাম সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হোক। নির্বাচনীয় কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলেছিলাম, সেটাও হয়নি। মঞ্জু আক্ষেপের স্বরে বলেছেন ‘গত রাতও আমাকে নির্ঘুম কাটাতে হয়েছে’।
খুলনা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মঞ্জু বলেন, নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি ও সাঁড়াশি অভিযানের নামে এখনো গণগ্রেফতার করছে পুলিশ। গতকাল রাতেও শত শত নেতাকর্মীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমাদের নির্বাচনী এজেন্ট, আমাদের ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, এমনকি সেন্টার কমিটির নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করেছে পুলিশ।
মঞ্জু বলেছেন, আমাদের এক কর্মীর বাবার ইজিবাইকের গ্যারেজে তালা মেরে দিয়েছে। এক কর্মীর মোটরসাইকেলটি পুলিশ গাড়িতে করে তুলে নিয়ে গেছে। এভাবে নানাবিধ নিপীড়ন আমাদের ওপরে চালছেই। আমি নির্বাচন করছি আর আমার কর্মীরা নির্বাচনী মাঠে থাকতে পারবে না; আমরা বক্তব্য দেব আর পুলিশ বলবে তারা সন্ত্রাসী অভিযান চালাচ্ছে। অথচ কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, ওয়ারেন্ট নেই। তাঁদের অপরাধ, শুধু তাঁরা বিএনপি কর্মী, ধানের শীষের কর্মী।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আওয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, মশিউর রহমান, হাবিবুর রহমান ও মেহেদী হাসান রুমী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন, শামা ওবায়েদ প্রমুখ।
দৈনিক দেশজনতা/ এন আর