নিজস্ব প্রতিবেদক:
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাজাকার রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন।
রিয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই এলাকায় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পাঁচটি অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২১ মার্চ প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য মামলাটি অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার তিন আসামির মধ্যে বেঁচে থাকা একমাত্র আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকির ২০১৫ সালের ১১ আগষ্ট গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে কারাগারে আছেন। মামলা দায়েরের পর তদন্ত শুরু হলে অপর দুই আসামির মধ্যে আমজাদ আলী গ্রেফতার হওয়ার পর অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। আরেক আসামি ওয়াজউদ্দিন ফকির পলাতক অবস্থায় মারা যান। অভিযোগ গঠনের পর তাদের দুজনেরই নাম বাদ দেওয়া হয়।
২০১৫ সালের ১১ আগষ্ট রিয়াজউদ্দিন ফকির ও হাজী আমজাদ আলী গ্রেফতারের পর ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আনার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমজাদ আলী।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ফুলবাড়িয়ার রাজাকার বাহিনীর প্রধান আমজাদ হাজী (মৃত) ও আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন ফকির। একই উপজেলার ভালুকজান গ্রামের শহীদ তালেব মণ্ডলের ছেলে খোরশেদ আলী বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অভিযোগ, তার বাবা তালেব মণ্ডলকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আখিলা নদীর ব্রিজের ওপর দাঁড় করে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় রাজাকার বাহিনীর প্রধান আমজাদ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান রিয়াজ ফকিরের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় আমজাদ আলী, রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও ওয়াজউদ্দিন হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধে নেতৃত্ব দেন। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু মানুষকে হত্যা ও পাটিরায় ৩ হিন্দু নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ২২ আগষ্ট থেকে ২১ নভেম্বরের মধ্যে ফুলবাড়িয়া উপজেলার বেবিট্যাপি স্ট্যান্ড, রাঙ্গামাটিয়া ঈদগাহ সংলগ্ন বানা নদী, দিব্যানন্দ ফাজিল মাদরাসা, ফুলবাড়িয়া ঋষিপাড়া, আছিম বাজার ও ভালুকজান গ্রামে আসামিরা মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর তদন্ত শুরু করেন। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ এনে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অভিযুক্ত দুই আসামিই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
দৈনিক দেশজনতা/ এন আর